যথেষ্ট সুযোগ থাকার পরেও জাতীয় পরিচয় পত্র করেননি? এখন নতুন ভোটার হতে চাইলে প্রয়োজন হবে অঙ্গিকারনামা। আপনার বয়স যদি ১৮ পাড় হয়ে গিয়ে থাকে এবং আপনি ভোটার এখন অব্দিও হতে পারেন নি, সেক্ষেত্রে ভোটার হওয়ার অঙ্গীকারনামা সহিত আবেদন করতে হবে। কিন্তু এই অঙ্গীকারনামা কি? কিভাবে লিখবেন আর উক্ত ফরম বিষয়ক সকল তথ্য জানাবো এই আর্টিকেলে।
ভোটার অঙ্গীকারনামা কি?
নতুন ভোটার আইডি তৈরি করা নির্বাচন কমিশনের একটি নিয়মিত কার্যক্রম, যেখানে দেশের যেকোনো নাগরিক পর্যাপ্ত তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড করতে গেলে, পূর্বে কখনোই NID কার্ড করা হয়নি এই মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা পেশ করতে হয় যার দ্বারা এই স্বীকৃতি দেয়া বুঝায় যে, ভবিষ্যতে যদি একাধিক NID কার্ড করার তথ্য পাওয়া যায় তবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি থাকবে না।
মোটকথা, ভোটার অঙ্গীকারনামা হলো একটি লিখিত ঘোষণাপত্র, যেখানে স্বীকার করবেন যে—
- আপনি এর আগে কখনো ভোটার হননি।
- আপনার একাধিক ভোটার আইডি নেই।
- যদি আপনার নামে আগে থেকে রেজিস্ট্রেশন থাকে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা মেনে নেবেন।
এই অঙ্গীকারনামাটি মূলত নির্বাচন কমিশনের একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যাতে কেউ ডুপ্লিকেট ভোটার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন না করতে পারে।
কেন ভোটার অঙ্গীকারনামা দরকার?
ভোটার আইডি কার্ড করা প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ভোটার হওয়ার জন্য অঙ্গীকারনামা চায়। যেমন:
- যদি কেউ নির্দিষ্ট বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পর ভোটার হতে চান।
- যদি কেউ দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন এবং দেশে ফিরে ভোটার হতে চান।
- যদি কোনো কারণে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পরও ভোটার নিবন্ধন করা না হয়ে থাকে
- যদি কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করে যে কেউ আগেও ভোটার ছিলেন কি না।
এক্ষেত্রে, ভোটার হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি একটি লিখিত অঙ্গীকারনামা জমা দিয়ে নিশ্চিত করবেন যে তিনি আগে কখনো ভোটার ছিলেন না এবং নতুন ভোটার হিসাবে নিবন্ধিত হতে চান।
পাশাপাশি এটাও মনে রাখা জরুরি যে, যদি একাধিক ভোটার হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে আবেদনকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, উক্ত বিষয়ে আপত্তি থাকবে না এই মর্মেই অঙ্গীকারনামা প্রদান করতে হয়।
নতুন ভোটার হওয়ার অঙ্গীকারনামা লেখার নিয়ম
ভোটার অঙ্গীকারনামা লিখার একটি নির্দিষ্ট ফরমেট আছে, যা সাধারণত সাদা কাগজে হাতে লিখে বা কম্পিউটারে টাইপ করে নিতে পারেন। চলুন সেটা দেখে নেয়া যাক।
অঙ্গীকারনামায় কী তথ্য দিতে হবে?
একটি অঙ্গীকারনামায় মোট ৩টি বিষয়ের তথ্য উঠে আসে। সেগুলো হলো:
১) ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন: আবেদনকারীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা (যদি আলাদা হয়)
২) ভোটার না হওয়ার কারণ, যেমন: কেন আপনি আগে ভোটার হননি? যদি বিদেশে ছিলেন, তাহলে কোথায় ছিলেন এবং কতদিন ছিলেন? কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তিগত কারণ থাকলে সেটিও উল্লেখ করতে পারেন।
৩) আইনি দায়বদ্ধতা, যেমন: আগে কখনো ভোটার হননি, এই মর্মে প্রতিশ্রুতি। ভুল তথ্য দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সম্মতি।
ভোটার হওয়ার অঙ্গীকারনামার নমুনা
আমি নিচে স্বাক্ষরকারী এই মর্মে অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমার নামঃ ………………………………………. পিতা/স্বামীঃ ……………………..,মাতা/………………..ভোটার এলাকা/ভোটার এলাকা কোডঃ ………………..ইউনিয়ন/পৌরসভাঃ ……………….ডাকঘর……………………..।
উপজেল ব্রাহ্মণপাড়া, জেলা কুমিল্লা। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কে ও বিবেচনা মতো এবং অন্যের প্ররোচনা ছাড়া এই মর্মে অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমি নির্ধারিত ফরম (ফরম-১১ ও ২) অনুযায়ী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার ও রেজিস্ট্রেশন অফিসার, রাক্খাপাড়া, কুমিল্লা অফিসের বরাবরে আবেদন করিয়াছি। যাহাতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক প্রকাশিত বর্তমান ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হইবার জন্য আবেদন করিয়াছি (ফরম-১১ ও ১২) বা আমার নাম অন্তর্ভুক্তির আবেদন করিয়াছি।
ভোটার তালিকা আইনের ধারা ১১ উপধারা ১ ও ২ এর বিধান অনুযায়ী ১৮ বছরের অধিক বয়সী কোন ব্যক্তি একাধিকবার নাম অন্তর্ভুক্ত করিতে পারিবেন না। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত বিদ্যমান ভোটার তালিকায় আমার নাম ইতঃপূর্বে অন্তর্ভুক্ত হয়নি বা একই সাথে একাধিকবার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি মর্মে আমি ঘোষণা করিতেছি।
আমি জানি, যদি কোন মিথ্যা তথ্য প্রদান করি অথবা পূর্বে কোথাও ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে থাকি এবং উক্ত তথ্য গোপন করি, তাহা হইলে ভোটার তালিকা আইন-২০০৯ (ধারা ১১) অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে। একইভাবে, উপরের যে কোন তথ্য বা ঘোষণার ক্ষেত্রে অসত্য প্রমাণিত হলে আমি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সম্পূর্ণ দায়ী থাকিব।
অতএব, উপর্যুক্ত বিষয়াবলী বিবেচনা করিয়া আমাকে নতুন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষর করিলাম।
বিনীত নিবেদক,
নাম / সাক্ষর / টিপসই:
পিতা / স্বামীর নাম:
ইউনিয়ন / পৌরসভা:
মোবাইল নাম্বার:
ভোটার হওয়ার অঙ্গীকারনামা PDF ফরম
আপনি যদি কম্পিউটারে টাইপ করা ফরমের উপর নিজের তথ্য হাতে লিখে সেটি আবেদনের সময় জমা দিতে চান সেক্ষেত্রে আপনার অঙ্গিকারনামার ফরম প্রয়োজন হবে। নিচের দেয়া PDF ফরমটি ডাউনলোড করে উক্ত কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন।
অঙ্গীকারনামা জমা দেওয়ার পদ্ধতি
নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করার পর একটা নিদিষ্ট সময় পর যখন আপনাকে আইডি কার্ডের ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার জন্য SMS করা হবে তখন অন্যান্য ডকুমেন্টসের সহীত অঙ্গীকারনামাও নিয়ে যেতে হবে এবং এক সঙ্গে সকল ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে।
চূড়ান্ত মন্তব্য
মোটকথা হলো, আপনার বয়স ১৬-২০ পাড় হওয়ার পরেও ভোটার আইডি কার্ড না করে থাকেন এবং একটা নিদিষ্ট বয়সসীমা কিংবা উপরে উল্লেখ্যিত সিচুয়েশনের মধ্য দিয়ে ভোটার আইডি কার্ড করাতে চান, সেক্ষেত্রে ভোটার হওয়ার অঙ্গীকারনামা প্রয়োজন হবে।
সেই মর্মে উক্ত বিষয়ে যা যা আপনার জানা প্রয়োজন তা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আশা করছি অঙ্গীকারনামা বিষয়ক সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন, এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্টে জানাতে পারেন, ধন্যবাদ।