জেনে নিন নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে (২০২৫ আপডেট) 

ভোট দেওয়া মানে নিজের মতামত জানানো। আর এই অধিকার পাওয়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে ভোটার হওয়া। প্রতিবছর নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হবে একটা নিদিষ্ট সময় যখন গণহারে উপযুক্ত বয়সের ব্যক্তিরা ভোটার হওয়ার আবেদন করতে পারে। 

তবে যদি কেউ উক্ত সময়ের আগে কিংবা পরে ভোটার হতে চায় সেটিও সম্ভব তবে উক্ত কাজে কিছু বেশি প্রসেসিং এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তা যাইহোক, আজকে আমরা আলোচনা করবো নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে সেই সম্পর্কে। 

আজকের এই আর্টিকেলে আমি খুব সহজ ভাষায় বলবো, নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে, কীভাবে তৈরি থাকবেন ইত্যাদি। চলুন, শুরু করি!

ভোটার হওয়ার প্রথম শর্ত

প্রথমেই জেনে নিন, ভোটার হতে গেলে আপনার বয়স কত হতে হবে। ২০২৫ সালের আলোকে নির্বাচন কমিশন বলেছে, যারা ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে জন্মেছেন, তারাই এবার নতুন ভোটার হতে পারবেন। মানে, আপনার বয়স এখন কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। এটা চেক করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার বয়স এই শর্ত পূরণ করে, তাহলে তৈরি হয়ে যান, কারণ এনআইডি কার্ড পাওয়ার দরজা এখন খোলা!

কেন ভোটার হওয়া দরকার?

আপনি কি জানেন, বাংলাদেশে এনআইডি কার্ড শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে? তখন শুধু বায়োমেট্রিক আইডেনটিফিকেশন বিদ্যমান ছিলো। এরপর ২০১৬ সাল থেকে স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র উপস্থাপন করা হয়। স্মার্ট কার্ডে একটি ইন্টারগ্রেট সার্কিট কার্ড থাকে যা চিপ নামেও পরিচিত। স্মার্টকার্ডে এই চিপ কার্ড মেশিনের সাহায্যে রিড করা যাবে। সেখানে নাগরিকের সব তথ্য সংরক্ষিত আছে।

তাহলে বুজতেই পারছেন দেশের নাগরিকদের সনাক্ত করার জন্যই এই কার্ড তৈরি। তবে শুধু এটাই কারণ নয়, নির্বাচন একটি বড় কারণ ভোটার আইডি কার্ডের। মোট কথা এটি হলো আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র। এটা দিয়ে আপনি অনেক কিছু করতে পারবেন। যেমন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন, পাসপোর্ট করতে পারবেন, এমনকি চাকরির ফরম পূরণ করতেও এটা লাগে।

একটা উদাহরণ দেই। ধরুন, আপনি একটা ব্যাংকে গেলেন। তারা বলল, “এনআইডি কার্ড দেখান।” আপনার প্রাপ্য বয়স হওয়ার পরেও যদি আপনার কাছে না থাকে, তাহলে কিন্তু ঝামেলা হবে, ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন না! তাই ভোটার হওয়া মানে আপনার জীবনের অনেক কাজ সহজ করে দেওয়া।

নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে? 

ভোটার হতে গেলে কিছু কাগজপত্র তৈরি রাখতে হবে। এগুলো জোগাড় করা খুব সহজ, তবে আগে থেকে প্রস্তুত থাকলে সময় বাঁচবে। চলুন, একটা একটা করে দেখি কী কী লাগবেঃ

১. জন্ম নিবন্ধন সনদ

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ হচ্ছে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ। এটার নম্বর হতে হবে ১৭ ডিজিটের। এটা ছাড়া ভোটার হওয়া যাবে না। তাই নিশ্চিত করুন যে আপনার জন্ম সনদ আছে এবং সেটা ঠিক আছে। যদি না থাকে, তাহলে দ্রুত ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভায় গিয়ে করে নিন।

২. বাবা-মায়ের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি

আপনার বাবা-মায়ের এনআইডি কার্ডের একটা ফটোকপি লাগবে। যদি বাবা-মা না থাকেন, তাহলে চাচা, ফুফু বা কাছের কোনো আত্মীয়ের এনআইডি কার্ডের কপিও চলবে। এটা দিয়ে আপনার পরিচয় যাচাই করা হবে।

৩. বিয়ের কাগজ (যদি বিয়ে করে থাকেন)

যদি আপনি বিয়ে করে থাকেন, তাহলে আপনার বিয়ের কাবিননামার একটা কপি লাগবে। এছাড়া আপনার স্বামী বা স্ত্রীর এনআইডি কার্ড বা জন্ম সনদের কপিও দিতে হবে। তবে বেশিরভাগ ১৮ বছর বয়সী মানুষ বিয়ে করেন না, তাই এটা সবার জন্য লাগবে না।

৪. নাগরিক সনদপত্র

আপনার একটা নাগরিক সনদপত্র লাগবে। এটা পেতে হলে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে যেতে হবে। তারা আপনার ছবিসহ একটা প্রত্যয়নপত্র দেবেন। এটা খুবই জরুরি, তাই এটা তৈরি রাখুন।

৫. শিক্ষার সনদ (যদি দরকার হয়)

কিছু ক্ষেত্রে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ লাগতে পারে। যেমন, পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি বা এরকম কোনো সার্টিফিকেটের কপি। তবে এটা বাধ্যতামূলক নয়। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে এটা চাইতে পারে।

৬. ঠিকানার প্রমাণ

আপনার স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণ করতে হবে। এজন্য গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল বা টেলিফোন বিলের একটা কপি দিলেই হবে। এখন অনেকে বলতে পারেন, “আমার নামে তো এসব বিল নেই!” চিন্তার কিছু নেই। আপনার বাবার বা গার্জিয়ানের নামে বিল থাকলেই চলবে। যদি বিল না থাকে, তাহলে জমির খতিয়ান বা খাজনার রশিদের কপিও দিতে পারেন।

৭. প্রবাসীদের জন্য

যারা বিদেশে থাকেন, তাদের জন্য পাসপোর্টের ফটোকপি, ভিসার কপি আর বিমানের টিকেটের কপি লাগবে। এগুলো দিয়ে আপনার পরিচয় আর ঠিকানা যাচাই করা হবে।

৮. মৃত্যু সনদ (যদি দরকার হয়)

যদি আপনার বাবা-মা মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে তাদের মৃত্যু সনদের একটা কপি দিতে হবে। এটা খুব কম ক্ষেত্রে লাগে, তবে তৈরি থাকলে ভালো।

ভোটার আইডি কার্ড করতে কখন আর কোথায় যেতে হবে?

প্রতিবছরই একটি নিদিষ্ট সময় স্থানীয় একালায় মাইকিং করে বুথ বসানো হয়। সেখানে ক্যামেরা, আইরিশ স্ক্যানার আর অন্যান্য জিনিস থাকবে। লোকেশনের ক্ষেত্রে তারা মাইকিং করে জানিয়ে দেবে কবে কোথায় যেতে হবে। আপনি শুধু কাগজপত্র নিয়ে যাবেন, ছবি তুলবেন, আঙুলের ছাপ দেবেন, আর চোখের আইরিশ স্ক্যান করাবেন। এরপর আপনার এনআইডি কার্ড তৈরি হয়ে যাবে।

তবে আপনি যদি এমন সময় ভোটার আইডি কার্ড করেন যখন গণহারে কার্ড করা হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে অনলাইনে কিংবা নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে NID কার্ডের আবেদন করতে পারবেন। পুরো বিষয়টি সহজে বুজতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন। 

চূড়ান্ত মন্তব্য 

ভোটার হওয়া শুধু একটা কার্ড পাওয়া নয়, এটা আপনার দেশের প্রতি দায়িত্ব, আপনার নাগরিত্বের প্রমাণ। তাই নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে জেনে নিয়ে কাগজপত্র তৈরি করুন, নিকটস্থ নির্বাচন কমিশন অফিসে যান কিংবা অনলাইনে বসেই আবেদন করে ফেলুন। তাছাড়া কোনো বিষয় বুজতে অসুবিধে হলে কমেন্টে জানান। 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top