আপনার হাতে যদি শুধুমাত্র স্মার্ট এনআইডি কার্ড থাকে, আর কোনো কাজে হঠাৎ পুরনো ১৭ সংখ্যার এনআইডি নাম্বার লাগে তাহলে চিন্তার কিছু নেই। অনেকেই জানেন না, ১০ সংখ্যার নতুন এনআইডি কার্ড থেকেই পুরনো নম্বর বের করা সম্ভব।
যেমনটা আমরা জানি, বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বর্তমানে ১০ সংখ্যার স্মার্ট কার্ড আকারে প্রদান করা হলেও, অতীতে ১৭ সংখ্যার এবং ১৩ সংখ্যার এনআইডি কার্ড ব্যবহৃত হতো। অনেক সময় পুরাতন ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বরের প্রয়োজন পড়ে, যেমন সিম কার্ড রিপ্লেসমেন্ট, মোবাইল ব্যাংকিং তথ্য হালনাগাদ, বা পুরাতন দলিল যাচাইয়ের ক্ষেত্রে। আপনার হাতে যদি শুধু ১০ সংখ্যার স্মার্ট এনআইডি কার্ড থাকে, তাহলে কীভাবে ১৭ সংখ্যার পুরাতন এনআইডি নম্বর বের করবেন? এই আর্টিকেলে আমরা এই বিষয়টিই সহজ এবং কার্যকরী পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো।
কেন ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বর প্রয়োজন?
১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম শুরু হওয়া ১৭ ডিজিটের এনআইডি কার্ড, বাংলাদেশের প্রত্যোক নাগরিকের পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে দীর্ঘ ৪৯ বছর যাবত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে অনেকেই মনে করেন, যেহেতু এখন ১০ সংখ্যার স্মার্ট এনআইডি চালু হয়েছে, তাই আগের নম্বর আর প্রয়োজন হবে না।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এখনো দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পুরোনো ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বর চাওয়া হয়। বিশেষ করে যেসব নথি বা সিস্টেম আগে তৈরি করা হয়েছিল পুরাতন এনআইডির ভিত্তিতে, সেগুলোতে নতুন নম্বর অটো-আপডেট হয় না। চলুন দেখে নেই, কোন কোন পরিস্থিতিতে আপনার ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বরের প্রয়োজন পড়তে পারে:
- সিম কার্ডের মালিকানা যাচাই বা রিপ্লেসমেন্টে
২০১৫ থেকে বাংলাদেশে প্রতিটি মোবাইল সিম এনআইডি দিয়ে নিবন্ধিত হয়। তখন ব্যবহারকারী যেই এনআইডি নম্বর দিয়েছিলেন, সেটি রেকর্ডে থেকে যায়। এখন যদি আপনার সিম হারিয়ে যায় বা রিপ্লেস করতে চান, এবং সেটা ১৭ সংখ্যার এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে থাকে, তাহলে সেই পুরাতন নম্বর লাগবেই।
- মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট আপডেট করতে
বিকাশ, নগদ, রকেট—এই সব মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় এনআইডি দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। যারা পুরাতন সময়েই অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, তাদের তথ্য ১৭ সংখ্যার এনআইডির ভিত্তিতে রেকর্ড করা হয়েছে। এখন যদি আপনার স্মার্ট এনআইডি দিয়ে অ্যাকাউন্টের তথ্য আপডেট করতে চান, পুরাতন নম্বর দিয়ে ভেরিফাই করতেই হবে।
- দলিলপত্র, জমি বা প্রপার্টি সংক্রান্ত কাজে
জমি রেজিস্ট্রেশন, ক্রয়-বিক্রয় বা ওয়ারিশান সার্টিফিকেট তৈরির সময় অনেকেই ১৭ সংখ্যার এনআইডি ব্যবহার করেছেন। এখন হঠাৎ করে সেই পুরোনো দলিল খুঁজে পেলে, তার সঙ্গে আপনার বর্তমান এনআইডি মেলাতে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে পুরোনো নম্বর বের করে জমির মালিকানা প্রমাণ বা দলিলের প্রমাণ দেওয়া সহজ হয়।
- ব্যাংকিং ও সরকারি কাগজপত্রে পুরনো রেকর্ড
অনেক সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, পাসপোর্ট আবেদন, ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল ইত্যাদি সরকারি কাজে পুরাতন এনআইডি নম্বর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এইসব রেকর্ড আজও রয়ে গেছে বিভিন্ন অফিসের ডাটাবেইসে।
১৭ সংখ্যার এনআইডি বের করার পদ্ধতি
১০ সংখ্যার স্মার্ট এনআইডি কার্ড থেকে ১৭ সংখ্যার পুরাতন এনআইডি নম্বর বের করার জন্য স্মার্ট কার্ডের পেছনে থাকা QR কোড বা বারকোড স্ক্যান করতে হবে। নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করা হলো:
ধাপ ১: QR কোড স্ক্যানার অ্যাপ দিয়ে স্ক্যান করুন
আপনার ফোনে যদি ইতোমধ্যে কোনো QR কোড স্ক্যানার অ্যাপ না থাকে, তবে গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে যেকোনো নির্ভরযোগ্য QR কোড স্ক্যানার অ্যাপ ডাউনলোড করুন। যেমন, “QR Code Reader” বা “NeoReader QR & Barcode Scanner” অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। এরপর অ্যাপটি ইনস্টল করার পর এটি ওপেন করুন।
স্মার্ট কার্ডের পেছনে আপনি একটি ছোট্ট QR কোড দেখবেন। অ্যাপ চালু করে ক্যামেরা দিয়ে QR কোডটি স্ক্যান করুন। কিছুক্ষণের মধ্যে স্ক্যানার অ্যাপটি আপনার কার্ডের এনকোডেড তথ্য দেখাবে।
ধাপ ২: পুরাতন এনআইডি নম্বর খুঁজে বের করুন
স্ক্যান করার পর প্রদর্শিত তথ্যের মধ্যে আপনি একটি কোড দেখতে পাবেন, যেখানে <pin> বা <p>ID_Number</p> ট্যাগের মধ্যে একটি ১৭ সংখ্যার নম্বর থাকবে। উদাহরণস্বরূপ: <pin>19901234567890123</pin> এটিই আপনার পুরাতন ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বর। এই নম্বরের প্রথম ৪টি সংখ্যা সাধারণত আপনার জন্মসাল নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার জন্মসাল ১৯৯০ হয়, তাহলে নম্বরটি ১৯৯০ দিয়ে শুরু হবে।
শুরু তাই নয়, যদি আপনার ১৩ সংখ্যার পুরাতন এনআইডি নম্বর প্রয়োজন হয়, তাহলে ১৭ সংখ্যার নম্বর থেকে প্রথম ৪টি সংখ্যা (জন্মসাল) বাদ দিন। বাকি ১৩টি সংখ্যাই হবে আপনার ১৩ সংখ্যার এনআইডি নম্বর। এই ১৩ সংখ্যার মধ্যে আবার প্রথম ৭ টি সংখ্যা হলো জেলা কোড, উপজেলা কোড, ইউনিয়ন/পৌরসভা কোড এবং ওয়ার্ড/মৌজা কোড এবং পরবর্তী ৬ টি সংখ্যা ক্রমিক নম্বর।
সতর্কতা
পুরাতন এনআইডি নম্বর ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকুন। এটি শুধুমাত্র বৈধ এবং প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করুন। যদি QR কোড স্ক্যান করতে সমস্যা হয়, তাহলে কার্ডটি পরিষ্কার কিনা তা নিশ্চিত করুন বা ভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে দেখুন। কোনো কারণে নম্বর বের করতে না পারলে, নিকটস্থ নির্বাচন কমিশন অফিসে যোগাযোগ করুন।
চূড়ান্ত মন্তব্য
১৭ সংখ্যার পুরাতন এনআইডি নম্বর খুঁজে বের করতে কোনো জটিলতা নেই—শুধু জানাটা দরকার কোথায় খুঁজবেন আর কীভাবে। স্মার্ট এনআইডির পেছনে থাকা QR কোডই এখানে আপনার সহজ সমাধান। মাত্র কয়েকটি ধাপে, মোবাইলের স্ক্যানার অ্যাপ দিয়ে আপনি নিজের পুরাতন এনআইডি নম্বর জেনে নিতে পারেন—একদম নিশ্চিত ও নির্ভুলভাবে।
নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে, পুরোনো রেকর্ড ঠিক রাখতে বা অফিসিয়াল কাজে লাগাতে এই নম্বরটা অনেক সময় জরুরি হয়ে পড়ে। তাই সময় থাকতে এখনই জেনে নিন নিজের ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বর, স্ক্যান করে সংরক্ষণ করে রাখুন নিরাপদে।