রাশেদের এনআইডি কার্ড পাওয়ার পর তার চোখে পড়ল একটি বড় ভুল—তার জন্মতারিখের সঙ্গে একটি সংখ্যা গরমিল হয়ে গেছে! তাড়াহুড়ো করে তিনি অনলাইনে সংশোধনের জন্য আবেদন করলেন।
কিন্তু কয়েকদিন পর অফিসে যাওয়ার পর বুঝতে পারলেন, আসলে ভুলটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, কারণ তার প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রে আগের তারিখটাই ঠিক ছিল। এখন তিনি ভাবছেন, কীভাবে এই সংশোধনের আবেদন বাতিল করবেন?
অনেকেই রাশেদের মতো এই সমস্যায় পড়েন। ভুল তথ্য সংশোধন করতে গিয়ে পরে মনে হয়, আসলে পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই বা অন্য কোনো কারণে আবেদনটি আর চালিয়ে যেতে চান না। কিন্তু এই আবেদন বাতিল করার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে, যা না জানলে ঝামেলায় পড়তে পারেন।
তাই এই আর্টিকেলে আমরা ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করবো NID সংশোধন আবেদন বাতিল করার নিয়ম, কী কী কাগজপত্র লাগবে এবং কোথায় আবেদন জমা দিতে হবে।
NID সংশোধন আবেদন বাতিল করার কারণ
ভোটার আইডি কার্ডে ভুল তথ্য থাকলে তা সংশোধন করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু, কোনো কারণে যদি NID সংশোধন আবেদন বাতিল করার প্রয়োজন হয়, তবে প্রথমেই কারণ গুলো বুঝা উচিৎ, এতে করে পুরো প্রসেসটি সহজ হয়ে যাবে। মূলত সংশোধনী আবেদন বাতিল করার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। নিম্মে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
অনেক সময় NID কার্ড সংশোধন করতে গিয়ে আবেদনপত্রে পুনরায় ভুল তথ্য দেওয়া হয়ে থাকে যার জন্য আবেদনটি বাতিল করতে হয়। আবার ব্যক্তিগত বা অন্য কোনো কারণে মনে হতে পারে যে NID কার্ডের তথ্য সংশোধনের প্রয়োজন নেই। এমতাবস্থায় আবেদন বাতিল করতে হয়।
উক্ত বিষয়টি স্পর্ষ্ট ভাবে Identify করা জরুরি কেননা, পরবর্তীতে আবেদনপত্রে কারণটি উল্লেখ্য করতে হবে।
NID সংশোধন আবেদন বাতিল করার নিয়ম
আপনি যদি NID সংশোধনের জন্য আবেদন করে থাকেন এবং পরবর্তীতে সেটি বাতিল করতে চান, তবে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। যেমন: প্রথমে আপনাকে একটি লিখিত আবেদন তৈরি করতে হবে।
এই আবেদনে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং কেনো সংশোধনী আবেদন বাতিল করতে চান, তার কারণ উল্লেখ করতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনপত্রে যা যা উল্লেখ করতে হবে তা হলো:
- আপনার নাম
- জন্ম তারিখ
- এনআইডি নম্বর
- আবেদনের তারিখ
- আবেদন বাতিলের সুনির্দিষ্ট কারণ
Nid সংশোধন আবেদন বাতিলের দরখাস্ত লেখার নিয়ম
আবেদনপত্রটি A4 সাইজের কাগজে হাতে অথবা কম্পিউটারে টাইপ করে লিখতে পারেন। আবেদনপত্রে আপনার সমস্যা এবং সেটি কেন বাতিল করতে চান, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন। একটি সুন্দর এবং গোছানো আবেদনপত্র আপনার কাজকে সহজ করে দেবে। নিচে একটি নমুনা আবেদনপত্র দেওয়া হলো:
তারিখ: ০৫/০৪/২০২৫
বরাবর,
উপজেলা নির্বাচন অফিসার,
সাভার, ঢাকা – ১২১৬বিষয়: NID সংশোধন আবেদন বাতিল করার আবেদন।
জনাব,
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি মো: রাশেদুল রহমান, পিতা: মো: লুৎফর রহমান, গ্রাম/মহল্লা: সাভার, ডাকঘর: সাভার, জেলা: ঢাকা, বিগত ৩/০৪/২০২৫ তারিখে অনলাইনে আমার এনআইডি কার্ড সংশোধনের জন্য একটি আবেদন করেছিলাম। আমার NID নম্বর ১২৩৪৫৬৭৮৯০, জন্মতারিখ: ০১/০১/২০০০ ইং। আমার আবেদনটি অনলাইনে এখনো অনুমোদিত হয়নি।যে সমস্যার কারণে আমি আমার এনআইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন করার জন্য আবেদন করেছিলাম, সেই সমস্যাটি সমাধান হয়ে যাওয়ায় আমি আমার সংশোধনের আবেদনটি বাতিল করতে ইচ্ছুক।
অতএব, মহোদয়ের নিকট আমার বিনীত অনুরোধ এই যে, আমার NID সংশোধন আবেদনটি বাতিল করে আমাকে বাধিত করবেন।
বিনীত নিবেদক,
নাম: মো: রাশেদুল রহমান
NID: ১২৩৪৫৬৭৮৯০
মোবাইল: ০১৭২০০০০০০০
Nid সংশোধন আবেদন বাতিল ফরম pdf
এই পর্যায়ে নিম্মে আবেদনপত্রের পিডিএফ ফরম দিয়ে দিচ্ছি। এর দ্বারা আপনি কেবল নিজের তথ্যটুকু লিখেই জমা দিতে পারবেন। এটা ডাউনলোড করে প্রিন্ট আউট করে নিতে হবে।
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার নিয়ম
আবেদনপত্র তৈরি করার পর, এটি সরাসরি আপনার ভোটার এলাকার উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে। অন্য কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে এটি জমা দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে:
- আবেদনপত্রটি অবশ্যই A4 সাইজের কাগজে হতে হবে।
- হাতে লেখা অথবা কম্পিউটারে টাইপ করা যাবে।
- আবেদনপত্রে আপনার স্বাক্ষর থাকতে হবে।
- আবেদনপত্রটি নিজে গিয়ে জমা দিতে হবে।
NID সংশোধনের আবেদন বাতিল করার পদ্ধতি
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর, নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মকর্তারা আপনার আবেদনটি যাচাই করবেন। যদি আপনার আবেদনপত্রে উল্লিখিত কারণ যথার্থ হয়, তবে তারা আপনার সংশোধনের আবেদন বাতিল করে দেবেন।
সাধারণত, NID সংশোধন আবেদন বাতিল হতে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে। আবেদন বাতিল হওয়ার পর, আপনি আপনার মোবাইল ফোনে একটি SMS পাবেন অথবা NID Service ওয়েবসাইটে গিয়েও বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারবেন।
NID সংশোধন আবেদন বাতিল করার নিয়মাবলী
NID সংশোধন আবেদন বাতিল করার কিছু নিয়মাবলী রয়েছে যা আপনার জানা দরকার। এই নিয়মগুলি অনুসরণ করে আপনি সহজেই আপনার আবেদন বাতিল করতে পারবেন।
- সময়সীমা
আবেদন অনুমোদিত হওয়ার পূর্বে, আবেদনের সময় থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে NID সংশোধন আবেদন বাতিলের আবেদন করতে হবে। এই সময়সীমার মধ্যে আবেদন না করলে, আপনার আবেদন বাতিল নাও হতে পারে।
- কত টাকা লাগে?
NID সংশোধন আবেদন বাতিল করতে কোনো প্রকার ফি বা চার্জ লাগে না। এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা যায়।
- অনলাইন সুবিধা
বর্তমানে অনলাইনে NID সংশোধনের আবেদন করা গেলেও, এটি বাতিল করার জন্য আপনাকে সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে NID সংশোধন আবেদন বাতিলের কোনো সুযোগ নেই।
- কোথায় আবেদন করবেন?
NID সংশোধন আবেদন বাতিল করার জন্য আপনাকে আপনার ভোটার এলাকার উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে, সংশোধনের ধরনের উপর নির্ভর করে জেলা নির্বাচন অফিসেও আবেদন করতে হতে পারে।
যদি আপনার NID কার্ডে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হয়, তবে সেক্ষেত্রে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের মহা পরিচালকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতে পারে।
উপসংহার
NID সংশোধন আবেদন বাতিল করার নিয়ম জানা থাকলে আপনি সহজেই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী এটি বাতিল করতে পারবেন। এই ব্লগ পোস্টে আমরা NID সংশোধন আবেদন বাতিল করার নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, সময়সীমা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি, এই তথ্যগুলো আপনার জন্য সহায়ক হবে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।