আপনার যদি একাধিক ভোটার আইডি কার্ড থাকে তবে এখনই ১টি বাতিল করে দিন, নয়তো জেল জরিমানা দিতে হতে পারে। তবে আপনি যদি ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার নিয়ম না জেনে থাকেন তবে এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জেনে নিয়ে উক্ত কাজটি করে ফেলুন।
কেন ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে হতে পারে?
বর্তমানে নির্বাচন কমিশন ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচিং কার্যক্রম চালু রেখেছে। তাই, যদি কেউ একাধিকবার ভোটার হয়ে থাকেন, তবে তা ধরা পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এমন পরিস্থিতিতে, দ্রুত একটি ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, একাধিকবার ভোটার হওয়া একটি আইনত অপরাধ। তাছাড়া আপনার বেশ কিছু কারণে ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবে, যেমন:
১) যদি আপনার অজান্তে বা ভুলবশত কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে দুইবার ভোটার হয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে একটি আইডি কার্ড বাতিল করা জরুরি।
২) ১৮ বছরের কম বয়সে যদি কেউ ভুল তথ্য দিয়ে ভোটার হয়ে থাকেন, তবে তার আইডি কার্ড বাতিল করা লাগবে।
৩) ভোটার হওয়ার সময় যদি কোনো ভুল তথ্য দেওয়া হয়ে থাকে, যা পরবর্তীতে সংশোধন করা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে আইডি কার্ড বাতিল করার প্রয়োজন হবে।
একাধিকবার ভোটার হলে কি করবেন?
যদি আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার নাম দুইবার ভোটার তালিকায় উঠেছে, তাহলে দেরি না করে দ্রুত নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করুন। এক্ষেত্রে, একটি লিখিত আবেদনের মাধ্যমে আপনার সমস্যাটি জানাতে হবে এবং একটি আইডি কার্ড বাতিলের জন্য অনুরোধ করতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে কি কি লাগে?
স্বাভাবিক ভাবেই ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং তথ্যের প্রয়োজন হবে। তবে ডকুমেন্টস এর পাশাপাশি একটি আবেদনপত্রও লিখতে হবে জেলা নির্বাচন অফিসারের নিকট। এবার নিচে একটি তালিকা দেওয়া হলো, যা আপনাকে আবেদন করার সময় সাথে রাখতে হবে:
- যেই ভোটার আইডি কার্ডটি (NID) বাতিল করতে চান সেটির ফটোকপি।
- যদি আপনার কাছে ডুপ্লিকেট বা বাতিলকৃত NID কার্ড থাকে তবে সেটি।
- যে ভোটার আইডি কার্ড পরবর্তীতে ব্যবহার করতে চান সেটির কপি।
- জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি।
- পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি (যদি থাকে)।
- সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অন্য কোনো প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস (যদি থাকে)।
এই কাগজপত্র গুলো আপনার পরিচয় নিশ্চিত করতে এবং আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে প্রয়োজন হবে। এগুলোর পাশাপাশি আবেদনপত্রটিই নিতে হবে।
কিভাবে ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করা যায়?
মোট ৪টি ধাপে ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হয়। নিচে প্রতিটি ধাপ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
ধাপ ১: লিখিত আবেদন জমা দিন
প্রথমত, আপনাকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত আবেদন করতে হবে। এই আবেদনে আপনাকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, আপনি কেন আপনার ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে চান। আবেদনটি হাতে লিখে অথবা কম্পিউটারে টাইপ করে জমা দিতে পারেন। কম্পিউটারে টাইপ করা আবেদন করাই ভালো, কারণ এতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
আবেদনে আপনার ভুল NID নম্বর এবং সঠিক NID নম্বর (যা আপনি ভবিষ্যতে ব্যবহার করতে চান) উল্লেখ করতে ভুলবেন না। এছাড়াও, আবেদনের সাথে আপনি কী কী কাগজপত্র জমা দিচ্ছেন, তার একটি তালিকা সংযুক্তিতে উল্লেখ করুন।
ধাপ ২: ডুপ্লিকেট ভোটার আইডি কার্ড জমা দিন
যদি আপনার কাছে ডুপ্লিকেট ভোটার আইডি কার্ড বা স্মার্ট কার্ড থাকে, তবে সেটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে ফেরত দিতে হবে। এর সাথে, আপনি বর্তমানে যে ভোটার আইডি কার্ডটি ব্যবহার করছেন এবং ভবিষ্যতে ব্যবহার করতে চান, সেটির একটি ফটোকপি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।
ধাপ ৩: আপনার পরিচয় নিশ্চিত করুন
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য আপনাকে অবশ্যই আপনার সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য আপনার বর্তমান NID কার্ড, জন্ম নিবন্ধন সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি জমা দিতে পারেন। এই ডকুমেন্টসগুলো আপনার পরিচয় প্রমাণ করতে সহায়ক হবে।
ধাপ ৪: আবেদন ফি জমা দিন
এবার ডুপ্লিকেট ভোটার আইডি বা জাতীয় পরিচয় পত্র বাতিল করার জন্য সরকারি ফি পরিশোধ করতে হবে। ফি পরিশোধের পর রসিদ বা চালানটি আবেদনের সাথে যুক্ত করে দিতে হবে। এরপর নির্বাচন কমিশন আপনার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে আপনার ডুপ্লিকেট ভোটার নিবন্ধন বাতিল করে দেবে।
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল হতে কতদিন লাগে?
ভোটার আইডি কার্ড বাতিলের আবেদন গ্রহণ করার পর সাধারণত এক মাসের মধ্যে কার্ডটি বাতিল হয়ে যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটি এক মাসের বেশি সময় নিতে পারে, এমনকি দুই মাস পর্যন্তও লাগতে পারে।
যদি আপনার সকল কাগজপত্র সঠিক থাকে এবং আপনার আবেদনের কারণটি যথার্থ হয়, তবে এক মাসের মধ্যেই আপনার ভোটার আইডি কার্ড বাতিলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তাই, আবেদন করার সময় সব কাগজপত্র নির্ভুলভাবে জমা দেওয়ার চেষ্টা করুন।
একাধিক ভোটার আইডি কার্ডের শাস্তি
আপনি ভুল করে হোক, কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবেই করেন না কেনো, নাম অথবা বয়সকে পরিবর্তন করে ভোটার হওয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এরূপ ডুপ্লিকেট ভোটার নিবন্ধন করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। তাই, এই ধরনের কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলুন এবং দ্রুত আপনার ডুপ্লিকেট ভোটার আইডি কার্ডটি বাতিল করুন।
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQ)
- আমি কিভাবে বুঝব আমার ভোটার আইডি কার্ড বাতিল হয়েছে কিনা?
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল হয়েছে কিনা, তা জানার জন্য আপনি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপনার NID নম্বর দিয়ে সার্চ করতে পারেন। এছাড়াও, আপনি সরাসরি নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারেন।
- ভোটার আইডি কার্ড বাতিলের আবেদন কোথায় জমা দিতে হয়?
ভোটার আইডি কার্ড বাতিলের আবেদন আপনার জেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।
- ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার পর কি নতুন করে আবেদন করতে হবে?
যদি আপনার আগের ভোটার আইডি কার্ডে কোনো সমস্যা থাকে এবং সেটি বাতিল করা হয়, তবে আপনাকে নতুন করে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে।
- ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার সময় কি কি ডকুমেন্টস জমা দিতে হয়?
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার সময় আপনার বাতিলকৃত NID কার্ডের কপি, জন্ম নিবন্ধন সনদ, এবং পরিচয় সংক্রান্ত অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে।
- ভোটার আইডি কার্ড কেন বাতিল হয়?
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো একাধিকবার ভোটার হওয়া, ভুল তথ্য প্রদান করা, অথবা অন্য কোনো আইনি জটিলতা।
- ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার নিয়ম কি কঠিন?
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার নিয়ম তেমন কঠিন নয়। সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে আবেদন করলে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে সহজেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়।
- ভোটার আইডি কার্ড বাতিল না করলে কি হতে পারে?
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল না করলে আপনি আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন। যেমন উক্ত বিষয়ে চিহ্নিত হলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা ৬ মাসের জেল হবে।
- ভোটার আইডি কার্ড বাতিলের জন্য অনলাইনে আবেদন করা যায় কি?
বর্তমানে ভোটার আইডি কার্ড বাতিলের জন্য সরাসরি অনলাইনে আবেদনের সুযোগ নেই। তবে, আপনি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে আবেদনপত্র ডাউনলোড করে পূরণ করতে পারেন এবং সেটি জেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে পারেন।
চূড়ান্ত মন্তব্য
একটি দেশের নাগরিক হিসেবে আপনার ১টির অধিক ভোতার আইডি কার্ড থাকা আইনগত অপরাধ, তাই যদি থেকে থাকে তবে দ্রুত বাতিল করে ফেলুন। এবং আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি আপনাকে ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করেছে। যদি আপনার আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ!