ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে গেলে সবচেয়ে চোখে পড়ে যে বিষয়টা, সেটা হলো: ক্যাটাগরি অনুযায়ী চার্জের পরিমাণ আলাদা। শুধু তাই নয়, প্রথম সংশোধন একটি নির্দিষ্ট ফিতে হয়, এবং পরবর্তী সংশোধনে ফি বাড়ে। এমনকি প্রথম সংশোধন আর পরবর্তী সংশোধনের খরচও এক নয়। জরুরি ডেলিভারির ক্ষেত্রে তো আবার আলাদা চার্জ। এমতাবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই মনে প্রশ্ন উঠে আসে, “কোন সময়ে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে?”
কেননা, কারো নাম ভুল, কারো জন্মতারিখ গড়মিল, কেউ আবার ঠিকানা বদলাতে চান, কিন্তু কোন তথ্য সংশোধনে কত টাকা লাগে, সেটা অনেকেরই পরিষ্কার না। তবে যেকোনো কারণেই হোক, ভোটার আইডি কার্ডে ভুল থাকলে তা সংশোধন করতে হয়।
নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, ভোটার আইডি কার্ডে বিভিন্ন ধরনের সংশোধনের জন্য ফি নির্ধারিত রয়েছে। ফি সংশোধনের ধরন এবং ডেলিভারি পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। তাই আপনার সংশোধিত কার্যের শুরুতেই সংশোধনী ফি সম্পর্কে অবগত থাকা ভালো।
তাই আজকের আর্টিকেলে একদম স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি কোন ধরণের তথ্য সংশোধনে কত টাকা লাগে, কবে লাগে বেশি, আর কখন জরুরি ফি গুনতে হয়। এক্ষেত্রে নিম্মে একেক করে বিভিন্ন ভুলে জর্জরিত ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে সেই বিষয়ে জানানো হলো।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে
NID কার্ড হওয়ার পর, প্রথম যখন সংশোধন করবেন তখন ফি লাগবে ২০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট, সর্বমোট ২৩০ টাকা। এরপর যখন ২য় বার সংশোধন করতে যাবেন তখন খরচ হবে ৩০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট, সর্বমোট ৩৪৫ টাকা। তবে ২য় বারের পর থেকে যতবারই সংশোধনের প্রয়োজন হোক না কেনো, চার্জ হবে ভ্যাটসহ ৫৭৫ টাকা।
উপরের যে হিসাবটি দেয়া হলো, এটা একটি ব্যাসিক হিসেব ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের। তবে এই সংশোধনের হিসেব আরেকটু গড়মিলে হয় ক্যাটাগরি ভিত্তিক আলাদা আলাদা চার্জের কারণে। যেমন, সংশোধনীর দিক থেকে চার্জের ক্ষেত্রে ২টি ভাগে ভাগ করা হয়।
১) মৌলিক তথ্য সংশোধন
২) অন্যান্য তথ্য সংশোধন
যখন ২জন ব্যক্তি ২ ক্যাটাগরির তথ্য সংশোধন করতে চাইবে তখন তাদের ২জনের সার্ভিস চার্জ পৃথক হবে। আশা করি ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে তার ব্যাসিকটা ক্লিয়ার করতে সক্ষম হয়েছি। এবার আসুন দেখে নেই ক্যাটাগরি ভিত্তিক সার্ভিস চার্জের পরিমাণ ও ধরণ সম্পর্কে।
মৌলিক তথ্য সংশোধন করতে কত টাকা লাগে
ভুল সংশোধনের ফি সম্পর্কে জানার আগে প্রথমেই জানতে হবে মৌলিক তথ্য সংশোধন বলতে কি বুঝানো হচ্ছে। এখানে যে কয়েকটি সেকশন নিয়ে ক্যাটাগরি তৈরি করা হয়েছে সেগুলো হলো:
- নিজের নাম এর বাংলা এবং ইংরেজিতে সংশোধন
- পিতা/মাতার নাম এর বাংলা ও ইংরেজিতে সংশোধন
- জন্ম তারিখ সংশোধন
- রক্তের গ্রুপ সংশোধন
- জন্মস্থান কিংবা ঠিকানা সংশোধন
- ছবি সংশোধন
- লিঙ্গ ( ছেলে/মেয়ে)
- সাক্ষর সংশোধন এবং
- জন্ম নিবন্ধন নম্বর সংশোধন ইত্যাদি
উপরে উল্লেখ্যিত তথ্য গুলো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ১ম বার সংশোধন করতে হয় তবে চার্জ হবে ২০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট = ২৩০ টাকা। ২য় বার সংশোধন করতে হলে চার্জ ৩০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট = ৩৪৫ টাকা। এবং এরপর যতবারই সংশোধন করতে হোক না কেনো, চার্জ ৪০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট = ৫৭৫ টাকা।
অন্যান্য তথ্য সংশোধন করতে কত টাকা লাগে
একটা ভোটার আইডি কার্ডে শুধু মৌলিক তথ্যই গুচ্ছিত থাকে না, এছাড়াও আরো অনেক ধরণের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। যদি কোনো কারণে মৌলিক তথ্য বাদে অন্যান্য তথ্য সংশোধন করতে হয় তবে আলাদা সার্ভিস চার্জে সেগুলো সংশোধনের আবেদন করতে হবে।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে, অন্যান্য তথ্য কোন গুলো? সেগুলো কি কার্ডের মধ্যে উল্লেখ্যিত অবস্থায় দেখা যায়? মূলত মৌলিক তথ্য বাদে অন্যান্য তথ্য সরাসরি আইডি কার্ডে দেখা যায় না। এগুলো সার্ভার কপিতে লিপিবদ্ধ থাকে। এই সকল তথ্য গুলো হলো:
- শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য
- কর্মস্থান
- ড্রাইভিং লাইসেন্সের তথ্য
- পাসপোর্টের তথ্য
- ধর্ম সংক্রান্ত তথ্য
- স্বামী বা স্ত্রীর নাম
- মোবাইল নম্বর ইত্যাদি।
কেউ যদি এই তথ্য গুলো পরিবর্তন করতে চায় সেক্ষেত্রে সরকারের ১৫% নির্ধারিত ভ্যাটসহ ১১৫ টাকা লাগবে। যখন আবেদন কার্য পরিচালনা করবেন তখন কত টাকা লাগবে সেটি উপরে দেখা যাবে তাই এতো চিন্তা করার কিছু নেই।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি হিসাব করার নিয়ম
উপরে এতক্ষণ অব্দি আমরা জেনেছি কোন ধরণের সংশোধন ফি কত টাকা এবার জানবো কিভাবে আপনি হিসাব করবেন যে আপনার ক্ষেত্রে সংশোধন ফি মোট কত টাকা হবে।
এক্ষেত্রে প্রথমেই বুজতে হবে আপনি কি ধরণের সংশোধন করতে চান, সেটি কি মৌলিক (ভোটার আইডি কার্ডে দেখা যায় এমন তথ্য সংশোধন) নাকি অন্যান্য (যেগুলো শুধুমাত্র সার্ভারে লিপিবন্ধ থাকে)।
যদি আপনি মৌলিক তথ্যের সংশোধনী করাতে চান সেক্ষেত্রে প্রথমবারের হিসেবে ২৩০ টাকা, আর যদি অন্যান্য তথ্যের সংশোধন করতে চান সেক্ষেত্রে মোট ১১৫ টাকা লাগবে।
মোট কথা হচ্ছে, ক্যাটাগরির ধরুন অনুযায়ী সংশোধনের ফি এর সাথে এক্সট্রা ১৫% ভ্যাট যোগ করে মোট সংশোধন ফি নির্নয় করতে হয়।
এবার যদি কেউ ২য় বার করে সেক্ষেত্রে মৌলিক তথ্যের ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে কিন্তু অন্যান্য তথ্যের ক্ষেত্রে সব সময় একই থাকবে। তবে কেউ যদি মৌলিক ও অন্যান্য উভয় সেকশনের তথ্যই পরিবর্তন করে তবে সার্ভিস চার্জ ৩৪৫ টাকা হবে।
বিশেষ সুযোগ,
এমন যদি কারো ক্ষেত্রে হয় যে, ইমার্জেন্সি সার্ভিস লাগবে। সেক্ষেত্রে সংশোধনী ফি এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। যেমন, মৌলিক তথ্যের সংশোধন ফি রেগুলার ডেলিভারিতে ২৩০ টাকা। একই কাজ যখন জরুরি সেবায় চায় সেক্ষেত্রে চার্জ গিয়ে দাঁড়াবে ৩৪৫ টাকায়।
তাই, আপনার চাহিদা অনুযায়ী ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে তা জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো যখন আবেদন কার্যক্রম করতে থাকবেন তখন। একমাত্র তখনই আপনার একাধিক কন্ডিশন অনুযায়ী শেষমেশ কত টাকা ফি হচ্ছে তা উক্ত স্কিনেই ভেসে উঠবে, যা কি না অনলাইনে (বিকাশ, নগদ, রকেট) দ্বারাই পে করতে পারবেন।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন সংক্রান্ত FAQ
১) ভোটার আইডি কার্ড কতবার সংশোধন করা যায়?
যতবার না অব্দি আপনার NID পরিপূর্ণ ভাবে শুদ্ধ হচ্ছে ততবার সংশোধন করা যাবে।
২) অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে?
যেহেতু সংশোধন গুলো ক্যাটাগরি অনুযায়ী হয়ে থাকে তাই সময়ের পার্থক্যও সময়ের আলোকে হয়। যেমন, ”ক” ক্যাটাগরির সংশোধনী আবেদন ৭ দিন, ”খ” ক্যাটাগরির সংশোধনী আবেদন ১৫ দিন, “গ” ক্যাটাগরির সংশোধনী আবেদন ৩০ দিন এবং “ঘ” ক্যাটাগরির সংশোধনী আবেদন ৪৫ দিন সময় লাগে।
৩) নামের ভুল সংশোধন করতে কত টাকা লাগে?
নামের ভুল সংশোধন করতে প্রথমবার হলে ২৩০ টাকা, ২য় বার হলে ৩৪৫ টাকা এবং ২য় বারের বেশি যত বারই হোক না কেনো ৫৭৫ টাকা লাগে।
৪) ঠিকানা সংশোধন করতে কত টাকা লাগে?
ঠিকানা সংশোধন করতে ২৩০ টাকা লাগে। যদি ২য় বার হয় তবে ৩৪৫ এবং এরপর থেকে প্রতিবার ৫৭৫ টাকা লাগবে।
৫) শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য সংশোধন করতে কত টাকা লাগে?
শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য সংশোধন করতে ১১৫ টাকা লাগে ভ্যাটসহ।
চূড়ান্ত মন্তব্য
আশা করছি এবারের আর্টিকেল দ্বারা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে তা সঠিক ভাবে বুজতে পেয়েরেছেন। ভোটার আইডি কার্ডে তথ্য ঠিক করাতে খরচ নির্ভর করে আপনি কী সংশোধন করচেন আর কোন সার্ভিস নিচ্ছেন। মৌলিক সংশোধনে যেমন খরচ কম, তেমনি জরুরি ডেলিভারির ক্ষেত্রে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। এখন আপনার বুঝে নেওয়া সহজ হবে, কোন ভুল সংশোধন করতে কত খরচ পড়বে, আর কখন সেটা প্রস্তুত হবে।