ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার নিয়ম 

জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড আমাদের পরিচয়ের একটা বড় অংশ। কিন্তু আপনার ভোটার আইডি কার্ডে থাকা স্বাক্ষরটা কি আপনার বর্তমান স্বাক্ষরের সঙ্গে মিলছে না? নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় বা পাসপোর্ট আবেদন করতে গিয়ে কি ঝামেলায় পড়েছেন? এমন পরিস্থিতিতে স্বাক্ষর পরিবর্তন ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। ভালো খবর হচ্ছে উক্ত কাজটা আপনি খুব সহজেই করতে পারবেন, তাও নিজেই।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করে। ২০২৪ সালে প্রায় ৫ লাখের বেশি সংশোধন আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে স্বাক্ষর পরিবর্তন একটা বড় অংশ। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, এটা একটা সাধারণ প্রক্রিয়া। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নিয়ম মেনে কাজ করলেই সব ঠিক হবে।

তাছাড়া এই লেখায় আপনি একদম ধাপে ধাপে জানতে পারবেন ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার নিয়ম, এক্ষেত্রে কী লাগবে, কোথায় জমা দিতে হবে, আর কত সময় লাগতে পারে ইত্যাদি। একবার পুরোটা বুঝে ফেললে পুরো প্রক্রিয়াটা অনেক সহজ মনে হবে। চলুন জেনে নেয়া যাক নিয়মটা। 

ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার কারণ 

অনেক সময় আমাদের স্বাক্ষর বদলে যায়। কেউ কেউ স্কুল বা কলেজে একটা স্টাইলের স্বাক্ষর করতেন, এখন চাকরি বা ব্যবসার কারণে অন্যরকম করেন। আবার কেউ হয়তো আগের স্বাক্ষরটা ভুলে গেছেন বা নতুন একটা স্টাইল ফলো করছেন, যেটা বেশি পছন্দের বা পেশাগতভাবে বেশি মানানসই।

এছাড়া অনেকেই পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় নতুন স্বাক্ষর ব্যবহার করেন। তখন যদি এনআইডি-তে আগের পুরানো স্বাক্ষর থাকে, কাগজপত্রে অমিল দেখা দেয়। ফলে নানা জায়গায় ভেরিফিকেশনে সমস্যা হয়। বিশেষ করে ব্যাংকিং, ট্রাভেল ডকুমেন্টস, সরকারি সুবিধা বা ভূমি রেজিস্ট্রেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে।

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, যাদের স্বাক্ষর অনেকটা ছেলেমানুষি বা এলোমেলো ছিল, তারা পরিণত বয়সে এসে সেটা বদলাতে চান। এই পরিবর্তনটা শুধু দরকারি না, অনেক সময় বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে, কারণ সরকারি নথিতে স্বাক্ষরের মিল না থাকলে অনেক দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

এই সব কারণ থেকেই মানুষ এনআইডি-তে নিজের নতুন স্বাক্ষর যুক্ত করতে চান, যাতে সব ডকুমেন্টে একসাথে সবকিছু মিলে যায়, এবং ভবিষ্যতে কোনো ঝামেলায় না পড়তে হয়।

ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করতে কি কি লাগবে 

NID কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তনের জন্য বেশ কিছু জিনিসের প্রয়োজন যা নিম্মে উল্লেখ্যিত:

  • সংশোধনী ফর্ম (ফর্ম নম্বর ২) যেখানে আপনার তথ্য আর নতুন স্বাক্ষর দিবেন।
  • বর্তমান এনআইডি কার্ডের একটা ফটোকপি লাগবে।
  • যদি নতুন স্বাক্ষর পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্সে থাকে, তাহলে তার ফটোকপি দিতে হবে।
  • পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে সত্যায়িত স্বাক্ষর দলিল লাগবে।
  • সংশোধন ফি ২৩০ টাকা ফি দিতে হবে।

ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার নিয়ম 

সংশোধনী ফরম ডাউনলোড 

স্বাক্ষর পরিবর্তনের জন্য প্রথমেই দরকার আবেদন ফরম। এক্ষেত্রে নম্বর ২ নং ফরম প্রয়োজন হবে। আপনার নিকটস্থ উপজেলা নির্বাচন অফিসে গেলে তারা ফর্ম দিবে। তবে অনলাইন থেকেও এটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট আউট করে নিতে পারেন। এটি করাই বেশি সুবিধাজনক। তাই নিচে ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার ফরমটি দিয়ে দিলাম, ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন।

ফরম পূরণ করার নিয়ম 

ফরমের শুরুতে আপনার নাম লিখবেন। এনআইডি কার্ডে যে নাম আছে, ঠিক সেটা লিখুন। ভুল হলে আবেদন বাতিল হতে পারে। এরপর এনআইডি কার্ডের নম্বর লিখুন। এটা ১০, ১৩ বা ১৭ ডিজিটের হতে পারে। কার্ড থেকে হুবহু কপি করে লিখুন।

এবার ফরমের একদম নিচের দিকে আসেন, ঝ নং এর ৩টা বক্স দেখবেন। সেখানের মধ্যটিতে কী বদলাতে চান, তা লিখতে হবে। এখানে লিখুন: “স্বাক্ষর পরিবর্তন”। বাকি ঘরগুলো কলম দিয়ে দাগ টেনে কেটে দিন। বুঝার সুবিধার্থে নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন। 

সবশেষে মার্ক করা স্থানে আপনার নাম, বর্তমান ঠিকানা আর একটা মোবাইল নম্বর লিখুন। মোবাইল নম্বরটা সঠিক হতে হবে, কারণ এটাতে এসএমএস আসবে। মন দিয়ে এই ধাপগুলো করলে ফর্ম পূরণ শেষ।

সংশোধন ফি জমা দিন 

স্বাক্ষর পরিবর্তনের জন্য ২৩০ টাকা ফি দিতে হবে। এই ফি জমা দেওয়ার কয়েকটা উপায় আছে, যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট আর সরাসরি দিতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অফিসে গিয়ে অন্যান্য ডকুমেন্টসের সহীত একত্রে আবেদন জমা দিতে পারবেন। 

যেহেতু বিকাশ সবচেয়ে জনপ্রিয়, তাই এটা ব্যবহার করলে সুবিধা হবে। এক্ষেত্রে বিকাশ অ্যাপে গিয়ে “পে বিল” অপশন থেকে “NID Services” সিলেক্ট করুন। এনআইডি নম্বর দিয়ে ২৩০ টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর ট্রানজেকশন নম্বরটা ফরমে লিখতে ভুলবেন না। 

নির্বাচন অফিসে আবেদন জমা দিন

ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার জন্য অনলাইনে আবেদন করা যায় না। কেননা, নতুন স্বাক্ষরটা নির্বাচন অফিসের স্বাক্ষর প্যাডে দিতে হবে। তাই ফরম আর কাগজপত্র নিয়ে নিজে উপজেলা নির্বাচন অফিসে যান। অন্য কেউ আপনার হয়ে জমা দিতে পারবে না।

অফিসে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন জমা দিন। তারা আপনার কাগজপত্র যাচাই করবে। যদি সব ঠিক থাকে, তাহলে সেদিনই স্বাক্ষর নিতে পারে। নয়তো একটা তারিখ দেবে, যেদিন আপনি গিয়ে স্বাক্ষর দিতে পারবেন।

আবেদন জমা দেয়ার পর করনীয় 

আবেদন জমা দেওয়ার পর ১৫ থেকে ৩০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। স্বাক্ষর পরিবর্তন “খ” ক্যাটাগরির আবেদন, যা জেলা পর্যায়ে অনুমোদন হয়। অনুমোদন হলে আপনার মোবাইলে এসএমএস আসবে। এসএমএসে বলা থাকবে যে আপনার এনআইডি সংশোধন হয়ে গেছে।

তখন services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার এনআইডি নম্বর আর জন্ম তারিখ দিয়ে অ্যাকাউন্টে লগইন করুন। “ডাউনলোড” মেনু থেকে নতুন এনআইডি কার্ডের পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে প্রিন্ট করুন।

চূড়ান্ত মন্তব্য 

স্বাক্ষর একটা ছোট জিনিস, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সব কাজেই এটা বড় ভূমিকা রাখে। এনআইডিতে যদি পুরনো বা ভুল স্বাক্ষর থাকে, তাহলে ঝামেলা লেগেই থাকে যেমন  ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে সমস্যা, পাসপোর্ট আটকে যায়, সরকারি সুবিধাও আটকে যেতে পারে।

তবে এই লেখায় আপনি যেভাবে ধাপে ধাপে নিয়মটা জেনেছেন, এবার আর ভয় বা দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ফরম পূরণ, ফি জমা, অফিসে জমা দেওয়াসহ সব কিছু স্পষ্ট আছে। আশা করি এবার একটু সময় আর মনোযোগ দিলেই আপনি নিজেই নিজের এনআইডির স্বাক্ষর বদলাতে পারবেন, কোনো দালাল বা বাড়তি খরচ ছাড়াই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top