বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ নতুন ভোটার নিবন্ধন করেন। নতুন ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর একটা হলো ছবি তোলা। অনেকেই ভাবেন, এটা কেবল একটা ছবি, কিন্তু এই ছবিটাই থাকবে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে। যেটা ব্যাংক, পাসপোর্ট, চাকরি কিংবা যেকোনো সরকারি-বেসরকারি কাজে ব্যবহার করতে হবে। তাই একটু ভুল হলেই পরে অনেক ঝামেলা।
এই আর্টিকেলটিতে আমরা ধাপে ধাপে দেখে নেব, ভোটার আইডি কার্ডের ছবি তোলার নিয়ম, তথা – কী করতে হবে, কী নিয়ে যেতে হবে, কীভাবে বসতে হবে, এমনকি কী পরা উচিত ইত্যাদি। যাতে আপনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ছবি তুলতে পারেন এবং ভবিষ্যতে কোনো সমস্যায় না পড়েন। চলুন শুরু করা যাক!
ভোটার আইডি কার্ডের ছবি তোলার নিয়ম
ভোটার আইডি কার্ডের ছবি তোলার নিয়ম খুবই সহজ, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ মেনে চলতে হবে। ছবি তোলার দিন ভোটার স্লিপ নাম্বার সঙ্গে নিন, সাদা পোশাক এড়িয়ে পরিপাটি পোশাক পরুন, এবং প্রুফ কপি ভালোভাবে চেক করুন (বিশেষ করে জন্ম তারিখ)।
ছবি তোলার পর আঙ্গুলের ছাপ, সই এবং চোখের আইরিশ স্ক্যান দিতে হবে। সব প্রক্রিয়া শেষে আপনার তথ্য অনলাইনে সাবমিট হবে, এবং আপনি যেকোনো সময় এনআইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন। সময় মেনে যান, ধৈর্য রাখুন, আর অপারেটরের নির্দেশ মানলে কোনো ঝামেলা হবে না!
যদি এই অল্প কিছু কথায় পুরো বিষয়টি বুজতে একটু অসুবিধে হয় তবে নিচে ধাপে ধাপে প্রতিটি বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে বুজিয়ে দেয়া রয়েছে পড়তে থাকুন।
ছবি তোলার দিন কি নিয়ে যেতে হবে?
ভোটার স্লিপ নাম্বার নিয়ে যান
ছবি তোলার দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে আপনার ভোটার হালনাগাদের ফরম নাম্বার বা ভোটার স্লিপ। যখন আপনি ফরম জমা দিয়েছিলেন, তখন আপনাকে একটা স্লিপ দেওয়া হয়েছিল। এই স্লিপে একটা নাম্বার থাকে। সেটা অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে যাবেন। এই নাম্বার ছাড়া আপনার তথ্য কম্পিউটারে এন্ট্রি করা যাবে না।
যদি স্লিপ নাম্বার না পান?
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভোটার হালনাগাদের লোকজন স্লিপ নাম্বার দেয়নি। তাহলে কী করবেন? চিন্তার কিছু নেই! যার কাছে আপনি কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন, ছবি তোলার দিন তিনি সেখানে উপস্থিত থাকবেন। তার কাছ থেকে নাম্বারটা নিয়ে নিন। তারপর সেই নাম্বার কম্পিউটার অপারেটরকে দিলেই তিনি আপনার তথ্য অনলাইনে এন্ট্রি করবেন।
কি ধরণের পোশাক পড়তে হবে?
সাদা পোশাক নয়!
ছবি তোলার সময় একটা জিনিস মাথায় রাখবেন—সাদা পোশাক পরে যাবেন না। কারণ সাদা রঙের পোশাক ছবিতে ভালো আসে না। এছাড়া যেকোনো রঙের পোশাক পরতে পারেন। তবে পরিপাটি, সুন্দর পোশাক পরে যাবেন। এটা আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি, তাই একটু স্মার্ট লুক থাকলে ভালো, তাই না?
অন্যদিকে, মেয়েরা হালকা রঙের শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ পরতে পারেন। আর ছেলেরা শার্ট বা পাঞ্জাবি পরে গেলে ভালো দেখায়। মনে রাখবেন, ছবিতে আপনার মুখটা পরিষ্কার দেখা যাওয়া জরুরি।
প্রুফ কপি কি? কেনো চেক করা জরুরি
যখন আপনি ভোটার স্লিপ নাম্বার দিবেন, কম্পিউটার অপারেটর আপনার তথ্য এন্ট্রি করে একটা প্রুফ কপি দেবেন। এই কপিতে আপনার নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানাসহ সব তথ্য থাকবে। এটা ভালো করে চেক করুন। কারণ এখানে যদি কোনো ভুল থাকে, তাহলে আপনার এনআইডি কার্ডেও ভুল থাকবে।
বিশেষ করে জন্ম তারিখটা বারবার দেখবেন। কারণ জন্ম তারিখ ভুল হলে পরে অনেক সমস্যা হতে পারে। যেমন, এনআইডি কার্ড ডাউনলোড করতে গিয়ে ঝামেলা হবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা বা পাসপোর্ট করার সময়ও সমস্যা হতে পারে। তাই প্রুফ কপি হাতে পাওয়ার পর একটু সময় নিয়ে সব তথ্য মিলিয়ে নিন।
যদি ভুল থাকে?
ধরুন, আপনার নামের বানান ভুল হয়েছে বা জন্ম তারিখ মিলছে না। তাহলে তৎক্ষণাৎ অপারেটরকে জানান। তিনি সেটা ঠিক করে দেবেন। এই ছোট্ট কাজটা আপনাকে ভবিষ্যতে বড় ঝামেলা থেকে বাঁচাবে।
ভোটার আইডি কার্ডের ছবি তোলার প্রক্রিয়া
- ছবি তোলার ধাপ
প্রুফ কপি চেক করার পর অপারেটর আপনাকে একটা চেয়ারে বসতে বলবেন। সেখানে একটা ক্যামেরা দিয়ে আপনার ছবি তোলা হবে। ছবি তোলার সময় সোজা বসুন, মুখে হালকা হাসি রাখুন। এটা আপনার এনআইডি কার্ডের ছবি, তাই একটু স্মার্ট দেখাতে ক্ষতি নেই!
- আঙ্গুলের ছাপ দেওয়া
ছবি তোলা শেষ হলে আপনাকে আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে। একটা ফিঙ্গার স্ক্যানার থাকবে। সেখানে আপনার দুই হাতের পাঁচটা আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হবে। অপারেটর আপনাকে বলে দেবেন কীভাবে আঙ্গুল রাখতে হবে। শুধু তার কথা মন দিয়ে শুনুন আর করুন।
- সই করা
এরপর আপনাকে সই করতে হবে। একটা স্ক্যানারের উপরে আপনার নাম লিখতে হবে। এই স্ক্যানারটা একটু পিচ্ছিল হতে পারে, তাই আস্তে আস্তে, সাবধানে সই করুন। আপনি যা লিখবেন, তা সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটারে দেখা যাবে। তাই ভুল হলে বুঝতে পারবেন। সুন্দর করে আপনার নামটা লিখে দিন।
- চোখের আইরিশ স্ক্যান
সবশেষে আপনার চোখের আইরিশ স্ক্যান করা হবে। একটা মেশিনে আপনার চোখ রাখতে হবে। মেশিনটা আপনার চোখের ছবি তুলে কম্পিউটারে সেভ করবে। এই প্রক্রিয়াটা খুবই সহজ, আর এক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
ভোটার আইডি কার্ডের ছবি তোলার পর করণীয়
আইরিশ স্ক্যান হওয়ার পর আপনার কাজ শেষ! এবার অপারেটর সব তথ্য অনলাইনে সাবমিট করবে। এরপর থেকেই আপনি যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে আপনার এনআইডি কার্ড অনলাইনে ডাউনলোড করতে পারবেন।
কিছু সতর্কতা
ছবি তোলার জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়। তাই ঠিক সময়ে পৌঁছে যান। ভোটার স্লিপ ছাড়াও জন্ম সনদ বা এসএসসি সার্টিফিকেট সঙ্গে রাখলে ভালো। কেননা, কখনো কখনো এগুলো লাগতে পারে। সবশেষে যেহেতু অনেক মানুষের ভিড় হতে পারে তাই একটু ধৈর্য নিয়ে যান।
চুড়ান্ত মন্তব্য
ভোটার আইডি কার্ডের ছবি তোলার নিয়ম খুব জটিল কিছু নয়, যা এই আর্টিকেলে আমি চেষ্টা করেছি সবকিছু সহজ ভাষায়, ধাপে ধাপে বোঝাতে। আপনি যদি ভোটার স্লিপ নিয়ে যান, প্রুফ কপি ভালো করে চেক করেন, আর অপারেটরের কথা মন দিয়ে শোনেন, তাহলে কোনো ঝামেলা হবে না। তাছাড়াও আরো যদি কোনো বিষয় জানার থাকে তবে কমেন্টে জানাতে পারেন, ধন্যবাদ।