জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে করণীয়

আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি কার্ড হারিয়ে গেলে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে করণীয় কি এবং কীভাবে নতুন করে NID ফিরে পাবেন (হোক সেটা স্মার্ট কার্ড অথবা এনালগ কার্ড) তা নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করবো। 

জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে করণীয়

যদি কোন ভাবে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে যায় তবে আপনার সর্বপ্রথম কাজ হবে নিকটবর্তী থানায় গিয়ে জিডি করা। জিডি করার পর সেখান থেকে ১ কপি সংগ্রহ করতে হবে। এরপর, অনলাইন থেকে কার্ড রিইস্যু করার জন্য আবেদন করতে হবে। 

উল্লেখ্য যে, সেখানে দায়িত্বরত অফিসারের নাম, পদবী ও মোবাইল নাম্বারটি জেনে রাখবেন। কেননা অনলাইনে কার্ড রিইস্যু করার সময় এই তথ্যের প্রয়োজন হবে। 

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

যদি আপনার এনআইডি কার্ড হারিয়ে যায়, তাহলে আপনাকে থানায় জিডি করতে হবে। যদি কার্ডটি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে জিডি করার প্রয়োজন নেই, তবে নষ্ট কার্ডের একটি ছবি আপলোড করতে হবে। যদি কার্ডটি চুরি হয়ে যায়, তাহলেও জিডি করতে হবে।

হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র তোলার নিয়ম 

যেমনটা বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র পুনরায় তোলার জন্য অনলাইনে নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এরপর অনুমোদন হয়ে গেলে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন অথবা পুনরায় কার্ড আসার জন্য অপেক্ষা করতে পারবেন। 

এবার আসুন ধাপে ধাপে দেখে নেই, কিভাবে জাতীয় পরিচয় পত্র রিইস্যু করার জন্য ওয়েবসাইট থেকে আবেদন করা যায়। 

প্রথম ধাপ: এনআইডি ওয়ালেট অ্যাপ ডাউনলোড করুন

প্রথমে আপনার স্মার্টফোনে এনআইডি ওয়ালেট অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে। এই অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যায়। গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে সার্চ বারে “এনআইডি ওয়ালেট” লিখে সার্চ করুন। প্রথমে যে অ্যাপটি দেখাবে, সেটি ইনস্টল করুন। অ্যাপটি ইনস্টল হয়ে গেলে হোম স্ক্রিনে ফিরে যান।

দ্বিতীয় ধাপ: নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রবেশ ও একাউন্ট তৈরি

এখন যেকোনো ব্রাউজারে থেকে এই এড্রেসটি সার্চ করুন [https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/claim-account] অথবা উক্ত লিংকে ক্লিক করুন।

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর, “একাউন্ট নেই? রেজিস্টার করুন” এই অপশনে ক্লিক করুন। এবার আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (NID নম্বর) দিন। এরপর আপনার জন্ম তারিখ দিন (দিন, মাস, বছর)। এরপর একটি ক্যাপচা কোড দেখাবে। এই কোডটি সঠিকভাবে লিখে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।

উল্লেখ্য যে, যদি আপনার ইতিপূর্বে একাউন্ট করা থাকে তবে এই সেকশন স্কিপ করুন। সরাসরি একান্টে লগইন করুন। 

তৃতীয় ধাপ: ব্যক্তিগত তথ্য দিন 

এবারে আপনার বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা দিন। ঠিকানা দেওয়ার সময় বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা সঠিকভাবে সিলেক্ট করুন। ঠিকানা দেওয়া শেষ হলে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

চতুর্থ ধাপ: মোবাইল নম্বর যাচাই করুন

এখন আপনার মোবাইল নম্বর যাচাই করতে হবে। যদি আপনার মোবাইল নম্বরটি সঠিক থাকে, তাহলে বার্তা বাটনে ক্লিক করুন। আর যদি মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করতে চান, তাহলে মোবাইল পরিবর্তন করুন অপশনে ক্লিক করে নতুন নম্বর দিন। এবার আপনার ফোনে একটি ৬ ডিজিটের কোড আসবে। এই কোডটি ওয়েবসাইটে বসিয়ে সাবমিট করুন।

পঞ্চম ধাপ: এনআইডি ওয়ালেট অ্যাপে ফেস স্ক্যান করুন

ওয়েব পেজের ড্যাশবোর্ডে থাকা কোড লিখাটিতে ট্যাপ করুন। এবারে প্রথম দিকে ইন্সটল করে রাখা এনআইডি ওয়ালেট অ্যাপটি ওপেন করুন। একদম উপরের দিকে কোড নামক লিখাতে ক্লিক করুন। এবার অ্যাপে থেকে ফেস স্ক্যান অপশনে ক্লিক করুন। স্ক্যান শেষ হলে ওকে বাটনে ক্লিক করুন।

ষষ্ঠ ধাপ: পাসওয়ার্ড সেট করুন বা এরিয়ে যান

এবারে আপনি পাসওয়ার্ড সেট করতে পারেন অথবা এরিয়ে যান অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যেতে পারেন। পাসওয়ার্ড সেট করা বাধ্যতামূলক নয়, তবে নিরাপত্তার জন্য এটি সেট করে নেওয়া ভালো।

সপ্তম ধাপ: রিইস্যু অপশন সিলেক্ট করুন

রেজিস্ট্রেশন/লগিন করার পর ড্যাশবোর্ডের ডানপাশে রিইস্যু অপশনে ক্লিক করুন। এরপর এডিট বাটনে ক্লিক করুন। এখন আপনাকে কারণ উল্লেখ করতে হবে। যেমন, আপনার এনআইডি কার্ড হারিয়ে গেছে, চুরি হয়ে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে। সঠিক কারণটি সিলেক্ট করুন।

অষ্টম ধাপ: জিডি নম্বর এবং তথ্য দিন

যদি আপনার কার্ড হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায়, তাহলে জিডি নম্বর, থানার নাম, পুলিশ অফিসারের নাম এবং পদবী উল্লেখ করুন। জিডির তারিখও দিন। 

নবম ধাপ: ফি পরিশোধ করুন

এবারে আপনাকে একটি ফি পরিশোধ করতে হবে। ফি পরিশোধ করার আগে, আপনাকে বিতরণের ধরন সিলেক্ট করতে হবে। যেমন:

  • রেগুলার: কম ফি, কিন্তু সময় বেশি লাগবে।
  • আর্জেন্ট: বেশি ফি, কিন্তু দ্রুত পাবেন।

এরপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। এবারে আপনাকে ২৩০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এই টাকা আপনি মোবাইল ব্যাংকিং (যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট) এর মাধ্যমে দিতে পারেন।

বিকাশের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করার প্রক্রিয়া:

  1. বিকাশ অ্যাপ ওপেন করুন।
  2. বিল পে অপশনে ক্লিক করুন।
  3. এনআইডি সার্ভিসেস সিলেক্ট করুন।
  4. ডুপ্লিকেট রেগুলার অপশন সিলেক্ট করুন।
  5. আপনার এনআইডি নম্বর দিন।
  6. পেমেন্ট কনফার্ম করুন এবং বিকাশ পিন দিয়ে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।

দশম ধাপ: কাগজপত্র আপলোড করুন

পেমেন্ট সম্পন্ন করার পর, আপনাকে কাগজপত্র আপলোড করতে হবে। যদি আপনার কার্ড নষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে নষ্ট কার্ডের ছবি আপলোড করুন। আর যদি হারিয়ে যায়, তাহলে জিডির কপি আপলোড করুন। আপলোড শেষ হলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।

আইডি কার্ড সংগ্রহ/ডাউনলোড করুন

এখন আপনাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আপনার এনআইডি কার্ড প্রস্তুত হলে, আপনাকে একটি এসএমএস করা হবে। এই এসএমএসে বলা হবে কোথা থেকে এবং কখন আপনার নতুন এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।

এসএমএস পাওয়ার পর, নির্দিষ্ট তারিখে নির্বাচন অফিসে গিয়ে আপনার নতুন এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করুন। মনে রাখবেন, ফোনটি সঙ্গে নিয়ে যাবেন, কারণ এটি যাচাই করার জন্য প্রয়োজন হতে পারে।

যদি আপনার এনআইডি কার্ড নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আপনি সাময়িকভাবে এনআইডি ওয়ালেট অ্যাপ থেকে আপনার এনআইডি কার্ড ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারেন। এরপর কম্পিউটার দোকান থেকে লেমিনেটিং করে ব্যবহার করতে পারেন। তবে পরবর্তীতে মূল কপিটি সংগ্রহ করতে ভুলবেন না।

FAQ

১)  জিডি করতে কত টাকা লাগে?

এটা মনে রাখা জরুরি যে, থানায় জিডি করতে কোন টাকা লাগে না।

২) আবেদনের কতদিনের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র রিইস্যু হয়?

সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে SMS এর মাধ্যমে এপ্রুভালের খবর দেয়া হয় 

৩) জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে কিভাবে উঠানো হয়?

প্রথমে থানায় জিডি করতে হয়, এরপর জিডির কপি সহিত অনলাইনে NID রিইস্যু করার জন্য আবেদন করতে হয়। 

শেষ কথা

আশা করি এবার জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে করণীয় কি হবে বুজতে পেরেছেন। যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমি চেষ্টা করবো আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top