অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম

মানুষ মাত্রই ভুল হলেও, এই ভুলের মাত্রাটা কিছুটা বেশিই হয়ে থাকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রে। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, ভোটার আইডি কার্ড করার সময় যে তথ্য দেয়া হয় তার সাথে কার্ডের অমিল। যার জন্য পুনরায় করতে হয় সংশোধন। 

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার কাজটা কিছুটা জটিল প্রক্রিয়া হলেও অনলাইনে মাধ্যমে এখন ঘরে বসে খুব সহজেই তা করা যাচ্ছে। আপনিও যদি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন যে বা যাদের ভোটার আইডি কার্ডে কিছু না কিছু ভুল আছে এবং সংশোধনের উপায় খুজছেন, তাহলে আপনার জন্যই এই আর্টিকেলটি। কেননা, পুরো আর্টিকেল জুড়ে দেখাবো ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম বিস্তারিতভাবে। 

ভোটার আইডি সংশোধন করতে যা যা লাগে

আইডি কার্ড সংশোধন করার ক্ষেত্রে কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে সেটি নির্ভর করছে কোন বিষয়টি সংশোধন করা হবে তার উপর। তবে সংশোধনের বিষয়ে যেটিই হোক না কেন এমন কিছু ডকুমেন্টস রয়েছে যেগুলো প্রায় প্রত্যেকটি সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় সেগুলো হলো: 

  • ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ 
  • পিতা-মাতার আইডি কার্ড
  • পাসপোর্ট কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স

সাধারণত এই ডকুমেন্টস গুলা হলেই যেকোনো ধরনের সমস্যার সংশোধন করা যায়। তবে এগুলোর পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে আরও বিভিন্ন ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয়।  এ পর্যায়ে সংশোধনের বিষয়ের আলোকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস কি কি লাগবে সে বিষয়ে জানানো হলো: 

১) নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট: এইচএসসি বা সমমান সনদ, অনলাইনে থাকা জন্ম নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিবাহিত হলে বিবাহের কাবিননামা এবং সন্তানের এন আই ডি কার্ড যেখানে পিতা-মাতার শুদ্ধ নাম রয়েছে। 

২) জন্ম তারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট: এসএসসি বা এইচএসসি অথবা সমমান সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স, কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন পত্র।

৩) পিতা-মাতার নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট: এসএসসি কিংবা এইচএসসির সনদপত্র, অনলাইনে থাকা জন্ম নিবন্ধন সনদ, পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র, পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ, চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে অফিসের প্রধানের প্রত্যয়নপত্র, ভাই-বোনের পরিচয়পত্র। 

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য প্রথমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চলে যান সেখানে এনআইডি নাম্বার এবং জন্মতারিখ এর পাশাপাশি ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করুন। 

একাউন্ট রেজিস্ট্রেশনের পর লগইন করে প্রোফাইল থেকে এডিট লিংক এ ক্লিক করে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সংশোধন করুন এরপর সংশোধন ফি প্রদান এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপলোড করে আবেদন জমা দিন। 

ব্যাস এটুকুই হলো অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম। এবার এই পুরো বিষয়গুলো ধাপে ধাপে বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য নিম্নে উল্লেখিত প্রত্যেকটি স্টেপ অনুসরণ করুন। 

ধাপ ১ – প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান

আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য আপনার প্রথম কাজ হওয়া উচিত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো স্ক্যান করে নির্দিষ্ট সাইজে ক্রপ করে নেওয়া।  আপনি যেই বিষয়ে সংশোধন চাচ্ছেন সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো কি হবে সেটি উপরে ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমেই ডকুমেন্টসগুলো রেডি করে স্ক্যান করে রাখুন এবং পরবর্তী নির্দেশনা গুলো অনুসরণ করুন। 

ধাপ ২ – এনআইডি ওয়েবসাইটে রেজিষ্ট্রেশন

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এক্ষেত্রে গুগলে সার্চ করুন NIDW অথবা সরাসরি উপরের লিংকে প্রবেশ করুন। 

ড্যাশবোর্ডে দুইটি অপশন দেখবেন, পূর্বে একাউন্ট না থাকাটাই স্বাভাবিক তাই এখানে এসে “রেজিস্ট্রার করুন” বাটনে ক্লিক করুন। 

এবার একাউন্ট রেজিষ্টারের ধাপে NID Number অথবা Form Number এবং জন্ম তারিখের তথ্য দেয়ার পর সবশেষে প্রদর্শিত কোডটি প্রবেশ করিয়ে সাবমিট করুন।  

রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করার এই ধাপে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিভাগ, জেলা ও উপজেলার তথ্য গুলো দিয়ে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। 

ঠিকানা সাবমিট করা হয়ে গেলে একটি সচল মোবাইল নাম্বার দিয়ে ভেরিফিকেশন করতে হবে। এক্ষেত্রে উক্ত নাম্বারে একটি OTP যাবে যা এই বক্সে সাবমিট করতে হবে। 

এরপর আপনাকে ফেইস ভেরিফিকেশন করতে হবে। এক্ষেত্রে NID Wallet নামক মোবাইল অ্যাপটি ব্যবহার করবেন। উপরের ছবিটি লক্ষ্য করুন, সেখানে মার্ক করা স্থানে ট্যাপ করে কোড কপি করে নিন। 

এরপর প্লে স্ট্রোর থেকে NID Wallet অ্যাপটি ইন্সটল করে নিন। 

ইন্সটল করা হয়ে গেলে অ্যাপটি ওপেন করুন এবং Code লিখা স্থানে ক্লিক করুন। দেখবেন আর স্ক্যানের ঝামেলা করতে হচ্ছে না, সরাসরি ফেইস ভেরিফিকেশনের সেকশনে যেতে পারবেন। 

সবশেষে স্ক্রিনে প্রদর্শিত নিয়ম অনুযায়ী ফেইস ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করুন। 

এবার কাজ হলো পাসওয়ার্ড সেট করা। আপনি পরবর্তী লগিনের জন্য পাসওয়ার্ড সেট করে নিবেন। এতে করে বারবার ফেস ভেরিফিকেশনের মত বিষয়ে যেতে হবে না। 

এবার সেট পাসওয়ার্ড সেকশনে ক্লিক করুন এবং ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড সেট করুন। 

ধাপ ৩ – তথ্য সংশোধন

ইতিপূর্বে একাউন্ট খোলা হয়ে থাকলে লগিন ইনফরমেশন দিয়ে একাউন্টে লগইন করবেন। 

লগইন করলেই দেখতে পাবেন আপনার সামনে ড্যাশবোর্ড ওপেন হবে। 

এখানে চারটি অপশন রয়েছে: প্রোফাইল, রিইস্যু, পাসওয়ার্ড পরিবর্তন এবং ডাউনলোড। যেহেতু আমরা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করবো, তাই প্রোফাইলে ক্লিক করতে হবে।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য  প্রোফাইলে ক্লিক করার পর যে তথ্যগুলো সংশোধন করতে চান, সেগুলো এডিটে ক্লিক করে সংশোধন করবেন। ডিফল্ট ভাবে কোনোটা enable থাকবে না, যেটা ইডিট করতে চান সেটায় টিক মার্ক দিয়ে ইডিট বাটনে ক্লিক করলে সেটা ইডিট করতে পারবেন।  

আপনি যেটি সংশোধন করতে চান সেটি করে নিন। এখন “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করবেন। তারপর, জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধনকৃত তথ্যগুলো দেখতে পাবেন। 

ধাপ ৪ – জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি প্রদান

এবার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি প্রদান করতে হবে যার জন্য বিকাশ ব্যবহার সর্বোত্তম। এক্ষেত্রে প্রথমেই চলে যেতে হবে বিকাশের অ্যাপে। ড্যাশবোর্ড থেকে “পে বিল” নামক অপশনে ক্লিক করুন। সেখান থেকে NID Service অপশনটি খুজে বের করুন। পাওয়া গেলে সেটায় ট্যাপ করুন। 

এবার আপনার কাছ থেকে দুইটা তথ্য জানতে চাওয়া হবে। ১) আবেদনের ধরণ; ২) NID নাম্বার। তথ্য গুলো দিয়ে পরবর্তী ধাপে যান। এমতাবস্থায় আপনার কত টাকা পে করতে হবে সেটা দেখাবে। স্বাভাবিক নিয়মেই পে বিল সম্পন্ন করুন। 

পে বিল করা শেষ হলে আবার ওয়েবসাইটে ফিরে আসুন।  এখানে এসে পেজটির পরবর্তী অপশনে ক্লিক করলে আপনি যে টাকা দিয়েছেন তা দেখাবে। 

এখান থেকে আবেদনের ধরণ ও বিতরণের ধরন মেনুতে “regular” সিলেক্ট করে দিবেন আর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করবেন। 

ধাপ ৫ – ডকুমেন্ট আপলোড ও আবেদন সাবমিট

প্রথম ধাপে যে ডকুমেন্টস গুলো স্ক্যান করতে বলা হয়েছিলো যেগুলো এখানে আপলোড করতে হবে। সঠিক কাগজপত্র না দিলে, আপনার আবেদনটি গ্রহণ হবে না। তাই উপরে উল্লেখ্যিত ডকুমেন্টসের তথ্য অনুযায়ী কাগজপত্র সাবমিট করবেন। 

এবার আপনাকে সাবমিট অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে আবেদনটি সম্পুর্ণ করতে হবে। আবেদন সম্পন্ন করার পর আপনাকে ড্যাশবোর্ডে Redirect করা হবে। 

ধাপ ৬ – ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফরম ডাউনলোড

আবেদন সংক্রান্ত কাজ শেষ। এরপর পুনরায় প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করলে নিচের দেয়া ছবির মত একটা ইন্টারফেস আসবে যেখানে একটি ডাউনলোড বাটন পাবেন।

ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে আবেদন পত্রের অনলাইন কপির PDF ফাইলটি ডাউনলোড করে রাখুন। এটা তখন প্রয়োজন হবে, যখন নির্বাচন অফিস থেকে সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ডটি সংগ্রহ করতে যাবেন। 

আবেদন সঠিক ভাবে হয়ে গেলে ৭ – ৪৫ দিনের মধ্যে আপনাকে SMS এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। এরপর আপনি পুনরায় একাউন্টে লগিন করে সংশোধিত কার্ডটি প্রিন্ট করে ব্যবহার করতে পারবেন অথবা নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে নিয়ে আসতে পারবেন। 

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন ফি

এবার আসুন জেনে নেই জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য কত টাকা প্রয়োজন হবে সেই বিষয়ে। ভ্যাটসহ স্বাভাবিক নিয়মে প্রথমবার সংশোধন ফি ২৩০ টাকা। তবে আপনি যদি অন্যান্য তথ্য সেকশনে কিছু সংশোধন করেন তবে ফি পড়বে ১১৫ টাকা। 

তবে আপনি যদি উভয় সেকশনেই পরিবর্তন আনতে চান তবে খরচ পড়বে ৩৪৫ টাকা। তাছাড়া রিইস্যু চার্জও ৩৪৫ টাকা। এবং অতিজরুরি রিইস্যুর ক্ষেত্রে চার্জ পড়বে ৫৭৫ টাকা। 

তবে এখানে আরেকটি বিষয় আছে, আপনি কতবার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করছেন তার উপর ভিত্তি করেও চার্জ ধার্য হয়। নিম্মে সেই তালিকা দেয়া হলো: 

  • প্রথমবার সংশোধন: ২৩০ টাকা
  • দ্বিতীয়বার সংশোধন: ৩৪৫ টাকা
  • তৃতীয়বার ও পরবর্তী সংশোধন: ৫৭৫ টাকা

FAQ 

১) বিয়ের পর স্বামীর নাম সংযোজনের প্রক্রিয়া কি?

বিয়ের কাবিন ও স্বামীর ID Card – এই দুইটা তথ্যের আলোকে সংশোধন করতে হবে। অনলাইনে কিংবা নির্বাচন অফিস থেকে। 

২) বিচ্ছেদের পর স্বামীর নাম বাদ দিবো কিভাবে?

তালাকনামা সংযুক্ত করে সংশোধনের আবেদন করতে হবে। 

৩) পেশা পরিবর্তন করতে চাই, কিভাবে করবো?

নতুন পেশা সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সংশোধনী আবেদন করতে হবে। 

৪) পিতা-মাতা মৃত্য হলে নামের পাশে মৃত্য যুক্ত করবো কিভাবে?

মৃত্যু সনদ এর দ্বারা সংশোধনী আবেদন করতে হবে। 

৫) স্বাক্ষর পরিবর্তন করার পদ্ধতি কি?

নতুন স্বাক্ষরের নমুনাসহ প্রমাণপত্র যুক্ত করে আবেদন করতে হবে। তবে স্বাক্ষর কেবল ১ বারই পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে। 

এক নজরে পুরো বিষয়গুলো 

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করা যায়। আবেদন জমা দেওয়ার পর ৭ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে সংশোধন সম্পন্ন হবে। সংশোধিত কার্ডটি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করা যাবে বা নির্বাচন অফিস থেকে সংগ্রহ করা যাবে। 

এই আর্টিকেলে দেয়া গাইডলাইন অনুসরণ করে আপনি সহজেই আপনার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার দালালের সাহায্য না নিয়ে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন। আর জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য NIDPLUS ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top