নতুন ভোটার আবেদন করার পর সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ভোটার আইডি কার্ড পাওয়ার জন্য। আগে এই কাজের জন্য আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ অথবা কাউন্সিলর অফিসে যেতে হতো। কিন্তু এখন মোবাইলের মাধ্যমে ঘরে বসেই নতুন ভোটার আইডি কার্ড চেক করা যায়। কিন্তু কিভাবে? সেই বিষয়েই এই আর্টিকেলে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করবো। শুরুতেই ভোটার আইডি কার্ড চেক করার পদ্ধতি এক নজরে দেখে নেয়া যাক।
ভোটার আইডি কার্ড চেক করার পদ্ধতি সমূহ
আইডি কার্ড নতুন কিংবা পুরাতন, ভোটার আইডি কার্ড চেক করার কয়েকটি সহজ পদ্ধতি রয়েছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট এবং কিছু নির্ধারিত সরকারি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে nid কার্ড চেক করা যায়। নিম্মে পদ্ধতি গুলো দেখানো হলো।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড চেক
নতুন ভোটার আবেদন করার ক্ষেত্রে একটি আবেদন ফর্ম দেয়া হয়। সেই আবেদন ফরম এর নাম্বার নিয়ে ভোটার আইডি কার্ডটি চেক করা যায়। এক্ষেত্রে অনলাইনের মাধ্যমেই উক্ত কাজটি সেড়ে ফেলতে আপনার করণীয় হলো:
১) বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরাসরি এখানে ক্লিক করে কাঙ্খিত পেজটিতে চলে যান, যেখান থেকে ভোটার আইডি কার্ড চেক করতে পারবেন।

২) উপরর ছবিটি লক্ষ্য করুন, পেজটিতে আসার পর দুইটি বক্স পাবেন। যার প্রথম বক্সে আবেদন ফরমের নম্বর ও পরেরটিতে আবেদনকারীর জন্ম তারিখ দিতে হবে। সবশেষে ক্যাপচা পূরণ করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
৩) এরপর, পর্যায়ক্রমে বর্তমান ঠিকানা, স্থীয়া ঠিকানা সিলেক্ট করুন।
৪) মোবাইল নাম্বারে পাঠানো OTP পাঠানো হবে যা এখানে প্রদান করতে হবে।

৫) এই পর্যায়ে এসে ফেস ভেরিফিকেশন করতে হবে। যার কারণে NID Wallet অ্যাপ ইন্সটল করে নিতে হবে।
৬) এই সকল কাজ শেষ হওয়ার পর ডাউনলোড অপশন থেকে নতুন ভোটার আইডি কার্ডটি চেক কিংবা ডাউনলোড করতে পারবেন।
পুরাতন ভোটার আইডি কার্ড চেক
অবাক করার মত তথ্য হলেও এটাই সত্যি যে, নতুন ভোটার আইডি কার্ড চেক অনলাইনে করা গেলেও পুরাতন NID কার্ড (যেগুলোকে ১৭ সংখ্যা কিংবা ১৩ সংখ্যার নাম্বার রয়েছে) সেগুলো চেক করার একমাত্র উপায় হলো সরাসরি নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে যাওয়া।
উক্ত অফিসে গিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে পুরাতন NID Card Check করতে পারবেন।
NID নাম্বার দিয়ে ভোটার আইডি কার্ড চেক
অনেকেই আছেন যারা NID নাম্বার দিয়ে ভোটার আইডি কার্ড চেক করার চিন্তা করছেন, কিংবা বিভিন্ন কারণে ভোটার কার্ড চেক করার জন্য কেবল NID নাম্বার-ই রয়েছে। এমতাবস্থায়, NID চেক করার জন্য হয়তো সরাসরি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে লগিন করে চেক করতে হবে (যেটা ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে নতুন ভোটার আইডি কার্ড চেক করার সেকশনে) নয়তো ভিন্ন কিছু ট্রাই করতে হবে।
এবার ভিন্ন একটা নিয়ম দেখাবো আর সেটি হলো “পাসপোর্ট ফি জমা দেয়ার অটোমেটেড চালান সিষ্টেম ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে” এখানে যদিও আমরা কোনো ফি জমা দিচ্ছি না, তবে NID নাম্বার ও জন্ম তারিখ ব্যবহার করে ভোটার আইডি কার্ড চেক করতে পারবো।
উক্ত কাজটি করার জন্য প্রথমেই চলে যেতে হবে Autometed Challan System ওয়েবসাইটে। এরপর সেখানে থাকা “ব্যক্তি” নামক বাটনে ক্লিক করে জাতীয় পরিচয়পত্র অপশনটি সিলেক্ট করে দিতে হবে।
এরপর যথানিয়মে NID Number, Birth Date, Mobile Number এবং Email লিখে “Check NID” অপশনে ক্লিক করলেই উক্ত NID সংক্রান্ত তথ্য দেখা যাবে।
SMS এর মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড চেক করার নিয়ম
মোবাইলের মাধ্যমে SMS করেও ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য চেক করা যায়। এক্ষেত্রে পদ্ধতি হলো:
মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন,
NID <Space> Form Number <Space> Date of Birth এবং পাঠিয়ে দিন ১০৫ নম্বরে।
উদাহরণ: NID 6520342050 02012005
বিঃদ্রঃ জন্ম তারিখ অবশ্যই [দিন-মাস-বছর] এই ফরম্যাটে দিতে হবে।
তাছাড়া আপনি যদি নতুন ভোটার হিসেবে স্মার্ট কার্ড পান বা পুরাতন ভোটারের স্মার্ট কার্ড হয়েছে কি-না সেটি চেক করতে চান, তবে মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন:
SC <Space> NID <Space> NID Number এবং পাঠিয়ে দিন 105 নাম্বারে।
ফিরতি ম্যাসেজে আপনার স্মার্ট কার্ড হয়েছে কি-না, বা এই সংক্রান্ত আপডেট জানিয়ে দিবে। এভাবেই মূলত NID কার্ড চেক করা হয়।
জাতীয় পরিচয় পত্র চেক করার অন্যান্য পদ্ধতি
ভোটার আইডি কার্ড চেক করার আরেকটা দারুন পদ্ধতি হলো স্বয়ং নির্বাচন কমিশন থেকে সরবরাহ করা NID ভেরিফিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে NID Check দেয়া। এক্ষেত্রে নিদিষ্ট ফি প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন প্যাকেজ কিনে নিতে হয় porichoy.gov.bd সাইট থেকে।
এই সফটওয়্যার মূলত পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, ব্যাংক-বীমা বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে যাদের দ্রুত সময়ে একাধিক NID Verification এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। শুধু তাই নয়, ভোটার আইডি কার্ড চেক করার ফ্রীতে আরো বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যা নিম্মে আলোচনা করা হয়েছে।
মোবাইল দিয়ে ভোটার আইডি কার্ড চেক করার নিয়ম
মোবাইলের দিয়ে NID কার্ড চেক করার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করা। এক্ষেত্রে Online GD অ্যাপ হলো বিশ্বাস্থ নাম। কেননা, এই অ্যাপের মাধ্যমে ভোটার আইডি চেক করা যায়।

শুরুতেই প্লে স্টোর থেকে Online GD অ্যাপটি ইন্সটল করে নিন। এরপর নিবন্ধন অপশন গিয়ে NID Number ও জন্ম তারিখ দিয়ে সাবমিট করলে ভোটার আইডি কার্ড এর তথ্য চলে আসবে।
নাম ও ঠিকানাসহ জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করার পদ্ধতি
অনেক ক্ষেত্রেই ভেরিফিকেশনের জন্য নাম ও ঠিকানাসহ জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় যদি আপনি নিজেই নিচের আইডি কার্ড চেক করেন তবে সহজেই নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে লগিন করে দেখে নিতে পারেন।
তবে আপনি যদি অন্য কারো NID নাম্বার দিয়ে তার নাম ঠিকানা সহ NID কার্ড যাচাই করতে চান তবে সরাসরি এটা সম্ভব না হলেও একটু ট্রিক্সস খাটিয়ে কাজটা করা যায়। এক্ষেত্রে করণীয় হলো:
১) প্রথমেই জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইটে চলে যেতে হবে।
২) এরপর সেখানে থাকা উপরের ডানপাশের পেনশন রেজিস্ট্রশন বাটনে ক্লিক করুন।

৩) নতুন উইন্ডো ওপেন হলে সেখানে পেনশন সংক্রান্ত কিছু তথ্য থাকবে যা আমাদের প্রয়োজন নেই জানার, তবুও নীচের আমি সন্মত আছি বাটনে ক্লিক করুন মূল উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য।

৪) এই পর্যায়ে একটি নতুন পেজ ওপেন হবে যেখানে একটি ফরম দেয়া থাকবে। উক্ত ফরমে পেনশনের ধরণ নির্বাচন করতে হবে। তাছাড়া ১০/১৩/১৭ সংখ্যার এনআইডি নাম্বার প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি জন্ম তারিখ নির্বাচন করার পর মোবাইল নাম্বার প্রদান করতে হবে। যদিও ইমেইল আইডি প্রদান করতে হয় তবে এটা আবশ্যক নয়। অতঃপর ক্যাপচা প্রদান করে নীচের পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

৫) এবার মূলত নতুন একটি পেজ ওপেন হবে যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য সেকশনে যাবতীয় সকল ডিটেইলস দেয়া থাকবে উক্ত NID ধারীর। এখান থেকেই সহজে নাম ও ঠিকানাসহ ভোটার আইডি কার্ড চেক করতে পারবেন।
চুড়ান্ত মন্তব্য
সাধারণত নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং নতুন ভোটার আইডি কার্ডের অবস্থা জানার জন্য ভোটার আইডি কার্ড চেক করা হয়। আশা করি এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে নতুন ভোটার আইডি কার্ড চেক করার নিয়ম সম্পর্কে সকল তথ্য বিস্তারিত ভাবে জানাতে পেরেছি। এতো সময় ধরে যুক্ত থাকার জন্য ধন্যবাদ।